Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পেঁয়াজ চাষে বিপুল লোকসান, বিকল্প চাষের পরামর্শ দিচ্ছে রাজ্য

পেঁয়াজ চাষে লোকসান হয়েছে চাষিদের। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে বিকল্প চাষের পরামর্শ দিচ্ছে জেলা কৃষি দফতর। কৃষি আধিকারিকদের মতে, খেতের পর খেত জুড়ে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। আর অতিরিক্ত ফলনের কারণেই এ বারে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে চাষিদের।

ক্রেতা-নেই: রাস্তায় ডাঁই করে রাখা হয়েছে পেয়াঁজের বস্তা। ফাইল চিত্র

ক্রেতা-নেই: রাস্তায় ডাঁই করে রাখা হয়েছে পেয়াঁজের বস্তা। ফাইল চিত্র

বিমান হাজরা
সুতি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ১০:০০
Share: Save:

পেঁয়াজ চাষে লোকসান হয়েছে চাষিদের। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে বিকল্প চাষের পরামর্শ দিচ্ছে জেলা কৃষি দফতর। কৃষি আধিকারিকদের মতে, খেতের পর খেত জুড়ে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। আর অতিরিক্ত ফলনের কারণেই এ বারে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে চাষিদের।

চাষিদের দাবি, শেষ পর্যন্ত তাঁরা ভরসা করেছিলেন সরকারি আশ্বাসে। বহরমপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে অভাবি বিক্রি রুখতে আলু, ধান ও পাটের মতো ন্যায্য দামে পেঁয়াজ কেনার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই ঘোষণার পরে বেশ কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পেঁয়াজ কেনেনি প্রশাসন। ফলে অপেক্ষায় থেকে থেকে পচন ধরা পেঁয়াজ জলের দামেই শেষ পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন চাষিরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নবান্ন থেকে লিখিত নির্দেশ না আসায় চাষিদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কেনার ব্যাপারটা ঝুলে রয়েছে। সরলা ও কিশোরপুর ফার্মার্স ক্লাবের সম্পাদক ভাগবত মণ্ডল জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণা শুনে আশায় ছিলেন এলাকার পেঁয়াজ চাষিরা। কয়েকশো চাষি স্বাক্ষর করে বিডিও-র কাছে লিখিত আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিডিও জানিয়ে দেন, লিখিত নির্দেশ ছাড়া পেঁয়াজ কেনা সম্ভব নয়। এ দিকে, বৃষ্টিতে মাঠে পড়ে থাকা বস্তাবন্দি পেঁয়াজ পচতে শুরু করেছিল। তাই ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে হয়েছে।

বামুহার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ওসিকুল শেখ অবশ্য কিছুটা ভাগ্যবান। তিনি কুইন্টাল প্রতি ৮৫০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। ওসিকুল বলেন, “১২৫ কুইন্টাল পেঁয়াজ পেয়েছিলাম এ বারে। সরকারের আশ্বাসে ভরসা না করে মহাজনের সঙ্গে দরদাম করে সব পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছি। তবে এ বার বিকল্প চাষের কথা ভাবতে হবে।”

সুতি ২ বিডিও সন্দীপ ভট্টাচার্য বলছেন, “প্রশাসনিক বৈঠকে পেঁয়াজ কেনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কী ভাবে এবং কী দামে তা কেনা হবে তার লিখিত কোনও নির্দেশিকা হাতে না আসায় বিষয়টি ঝুলে রয়েছে।” ইতিমধ্যে অবশ্য লোকসানে পড়া চাষিরা তাঁদের কিসান ক্রেডিট কার্ড-সহ কৃষি ঋণ মকুবের আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছেন বিডিও এবং কৃষি দফতরের কাছে। সমস্ত আবেদনপত্র রাজ্য সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহকুমা কৃষি অধিকর্তা উত্তম কোনাই।

উত্তমবাবু জানাচ্ছেন, সুতিতে চাহিদা এবং জোগানের উপর ভারসাম্য না থাকার কারণেই পেঁয়াজে লোকসান হয়েছে চাষিদের। সেই কারণে এ বার পেঁয়াজের পরিবর্তে সুতিতে ডাল তথা বিভিন্ন ধরনের রবিশস্য চাষের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি দফতর। এক সময় পেঁয়াজ থেকে ভাল পয়সা পেয়েছেন সুতির চাষিরা। কিন্তু এখন বহু জায়গাতেই পেঁয়াজ চাষ শুরু হওয়ায় চাহিদা কমেছে। তাই সুতির ওই সব উর্বর জমিতে চাষে বৈচিত্র বাড়াতে হবে। ডাল-সহ রবিশস্য চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সুতির চাষিদের। ডালের চাহিদা আছে। বাজারও ভাল। কাজেই সমস্যায় পড়তে হবে না চাষিদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Onion Cultivation Cultivation Farmer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE