Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আঁধার পথেই আধার লাইন

কমন সার্ভিস সেন্টারগুলি বন্ধ করে দিয়েছে আধার কার্ড তৈরির কাজ। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন আধার কার্ডহীন বহু পরিবার।

আধার-অপেক্ষা: সোমবার রাতে বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

আধার-অপেক্ষা: সোমবার রাতে বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জে শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৮
Share: Save:

আধার বড় বালাই!

কেউ রাতের আঁধারে এসেই লাইন দিচ্ছেন। কেউ আসছেন কাকভোরে। তাতেও শেষরক্ষা হচ্ছে না। অনেককে ফিরতে হচ্ছে হতাশ হয়েই।

কমন সার্ভিস সেন্টারগুলি বন্ধ করে দিয়েছে আধার কার্ড তৈরির কাজ। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন আধার কার্ডহীন বহু পরিবার। কার্ড তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার গুটিকয়েক ডাকঘর ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে। ফলে সেখানে কার্ড করতে রাত থেকেই লাইন দিচ্ছেন লোকজন।

মুর্শিদাবাদে এখনও পর্যন্ত আধার কার্ড পেয়েছেন ৭৫.৯১ লক্ষ লোক। এখনও প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ বাসিন্দা আধার কার্ড পাননি। কারও কারও আধার কার্ড সংশোধনও করতে হবে।

সাগরদিঘির পূরক মুর্মু রঘুনাথগঞ্জে একটি ব্যাঙ্কের সামনে রবিবার রাত ১০টা থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। পূরক বলছেন, “বাড়ির সকলেরই আধার কার্ড আছে। আমি হস্টেলে থাকি। সেই কারণে আমার কার্ড করতে পারিনি। এর আগে দু’দিন সকালে এসে ঘুরে গিয়েছি। তাই রাতেই লাইনে দাঁড়িয়েছি।”

মাধাই হালদার এসেছিলেন সুতির ইন্দ্রনগর কলোনি থেকে। তাঁর কার্ড আছে। কিন্তু জন্মসালে ভুল। তাই তা সংশোধনের জন্য লাইন দিয়েছিলেন তিনি। কুলসুম বিবি এসেছিলেন মির্জাপুর থেকে। তিনিও নতুন কার্ড করাতে চান।

একই অবস্থা বহরমপুর ডাকঘরের সামনেও। রোজ সকালে ব্যারাক স্কোয়ারে প্রাতঃভ্রমণে বের হন মণীন্দ্রনগর গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা মৌসুমী মজুমদার। তিনি বলছেন, “সপ্তাহ খানেক থেকেই দেখছি ভোর সাড়ে ৪টেতেও ডাকঘরের সামনে কেউ চাদর পেতে বসে থাকছেন, কেউ ঘুমিয়ে কাদা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি তাঁরা কেউ এসেছেন বেলডাঙা থেকে, কেউ রেজিনগর কিংবা নবগ্রাম থেকে। তাঁরা সকলেই আধার কার্ড করাতে চান।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রথমে খোলা হয় ১৪১টি কমন সার্ভিস সেন্টার। পরে সব বন্ধ হয়ে চলছিল ৪১টি। ধুলিয়ানের এক কমন সার্ভিস সেন্টারের মালিক মোতাহার আলি বলছেন, “আমাদেরকে কাজ বন্ধ করতে বলে কেন্দ্রীয় সরকার লিখিত কোনও নির্দেশ দেয়নি। কেবল সিএসসি-র রাজ্য অফিস থেকে জানানো হয়েছে, ৫ মার্চ থেকে সফ্্টওয়্যারের আপডেট ভার্সন ছাড়া আধারের কাজ করা যাবে না। সফ্‌টওয়্যার আর আপডেট করে দেওয়া হয়নি। ফলে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি আমরা।”

রাজ্যে আধার কার্ডের দায়িত্বে ছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনে ‘কমন সার্ভিস সেন্টার’। সংস্থার রাজ্যের নোডাল অফিসার অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “৫ মার্চ থেকে আমাদের আর আধারের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই সব সিএসসি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জেলার ডাকঘরগুলিকে দিয়ে সে কাজ করানো হচ্ছে। ফলে কোথাও ১০টি, কোথাও ৩০টির বেশি আধার কার্ডের কাজ করা যাচ্ছে না।”

ডাক বিভাগের মুর্শিদাবাদ ডিভিসনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রবাল বাগচী জানান, বহরমপুর, রঘুনাথগঞ্জ, কান্দির তিনটি মুখ্য ডাকঘর ছাড়াও ধুলিয়ান ও জঙ্গিপুর ডাকঘরে আধারের কাজ করা হচ্ছে। আজিমগঞ্জে যান্ত্রিক গন্ডগোলের কারণে কাজ বন্ধ আছে। এ ছাড়াও দু’-চারটি ব্যাঙ্ক কাজ করছে।”

রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরের এক কর্তা বলছেন, “আপনারা মানুষের অসুবিধেটা দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু ডাকঘরের কী অবস্থা তা কেউ জানেন না। রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরে ২৬ জন কর্মীর জায়গায় এখন রয়েছেন মাত্র ৯ জন। ৫টি কাউন্টারে ৫ জন বসছেন। এক জন আধার কার্ড ব্যস্ত। ৩ জন কর্মী দিয়ে প্রধান ডাকঘর চলছে কী করে তা আমরাই জানি!” জানা গিয়েছে, জেলার অন্য ডাকঘরেও কর্মী সঙ্কট চলছে। একই সঙ্গে চলছে হয়রানিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhaar Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE