Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নাবালিকার বিয়ে রুখল করিমপুরের স্বয়ংসিদ্ধা

সন্ধ্যাবেলায় বিয়ে। সব আয়োজন সারা। আচমকা বিয়ে শুরুর কিছু ক্ষণ আগেই হাজির প্রশাসনের লোকজন, সঙ্গে  নাজিরপুর সারদা বালিকা বিদ্যালয়ের স্বয়ংসিদ্ধা কমিটির সদস্যরা। পাত্রী নাবালিকা। অতএব বিয়ে বন্ধ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০৮:১০
Share: Save:

সন্ধ্যাবেলায় বিয়ে। সব আয়োজন সারা। আচমকা বিয়ে শুরুর কিছু ক্ষণ আগেই হাজির প্রশাসনের লোকজন, সঙ্গে নাজিরপুর সারদা বালিকা বিদ্যালয়ের স্বয়ংসিদ্ধা কমিটির সদস্যরা। পাত্রী নাবালিকা। অতএব বিয়ে বন্ধ।

গত রবিবার করিমপুরে আইন ভেঙে নাবালিকার বিয়ের আয়োজনের খবর প্রশাসনকে দিয়েছিল স্বয়ংসিদ্ধা কমিটির ছাত্রীরাই। গত ২৫ মার্চ ২০১৭ স্কুলে ওই কমিটি তৈরি হয়। তার পর থেকে গত দেড় বছরে স্কুলের১৩টি নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে তারা আটকে গিয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে নাবালিকা নিজেই বিয়েতে আগ্রহী ছিল, আবার কোনও ক্ষেত্রে তার অমত সত্ত্বেও বাড়ির লোক জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই নাবালিকার বিয়ের কুফল ও ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা বুঝিয়ে বলে বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি প্রদীপ্ত দাস জানান, নিয়ম না-মেনে নাবালিকার বিয়ে দিলে শুধু নাবালিকার ক্ষতি হয় তা-ই নয়, বিয়ের কথা জানতে পেরে প্রশাসন যখন তা আটকে দেয় তখন অভিভাবকদেরও আর্থিক ভাবে প্রভূত ক্ষতি হয়। কারণ, তত ক্ষণে বিয়ের যাবতীয় খরচ তাঁরা করে ফেলেন। রতনপুরের বাসিন্দা ও নাজিরপুর সারদা বালিকা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর ক্ষেত্রেও অভিভাবকেরা প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছেন। এর অনেকটাই ধারদেনা করা। এইরকম দিশেহারা অবস্থায় পড়ার থেকে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকাই উচিত বলে প্রদীপ্ত দাসেদের পরামর্শ।

প্রশাসনিক কর্তারা অভিভাবকদের জানান, একাদশ শ্রেণীর ওই ছাত্রী পড়াশোনা চালিয়ে গেলে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী ও রূপশ্রী প্রকল্পের পঞ্চাশ হাজার টাকা পাবেন। ফলে বিয়েতে সমস্যা হবে না। করিমপুর-২ বিডিও সত্যজিৎ কুমারের কথায়, ‘‘জেনেশুনে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়া অপরাধ। আয়োজন সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও বিয়ের কথা জানার পরে প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। অভিভাবকদের সেটা আগেই ভাবা উচিত ছিল।’’ নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘বিশেষ করে বালিকা বিদ্যালয় গুলিতে সরকারি নির্দেশে স্বয়ংসিদ্ধা কমিটি তৈরি হয়েছে। তবে সব কমিটি তেমন ভাবে সক্রিয় নয়। নাজিরপুর সারদা বালিকা বিদ্যালয় কমিটি প্রথম থেকেই খুব সক্রিয়।’’ জেলার ডিআই অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রতিটি স্কুলের স্বয়ংসিদ্ধা কমিটিকে শক্তিশালী করতে আমরা কাজ শুরু করেছি। কারণ, নাবালিকার বিয়ে রুখতে এই কমিটি বড় ভূমিকা নিতে পারে।’’ এ দিন বিয়ের খবর পেয়ে কমিটির ছাত্রীরা তাঁদের শিক্ষকদের মাধ্যমে করিমপুর থানার ওসিকে খবর দেয়। জানানো হয় তেহট্টের এসডিপিওকে-ও। করিমপুর থানা ও নাজিরপুর ফাঁড়ির পুলিশ ছাত্রী ও শিক্ষকদের সঙ্গে পাত্রীর বাড়ি যান।” নাবালিকা পাত্রীর বাবা বলেন, “মুর্শিদাবাদের ওই যুবকের সঙ্গে মেয়ের ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়। সাবালিকা না হওয়ায় এই বিয়েতে আমাদের মত ছিল না। কিন্তু মেয়ের মানসিক অবস্থার কথা ভেবে বাধ্য হয়ে এই বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE