জনতার দরবারে। জিয়াগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
পরের দিন ভোট। বেলাবেলি তাই দুয়ারে খিল পড়েছিস সে বার। তবুও কড়া নড়ে উঠেছিল সে রাতে, খুব ঠান্ডা গলায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল— ‘কাল আর ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই চাচা, ভোট আপনা আপনি পড়ে যাবে!’
বছর ঘোরেনি সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের। এখনও হিম গলার সেই শাসানি শিরদাঁড়ায়। মাথা নিচু করে আসরাফুল শেখ বলছেন, ‘‘উনারা তো অভয় দিয়ে চলি যাবেন, তার পর...!’’
দুয়ারে ফের এসে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন। এ বার লোকসভা, গাঁ-গঞ্জের ভাষায় ‘বড় ভোট’। চাপা স্বরে চেনা শাসানি এ বারও ফিরতে শুরু করেছিল। ভারী বুটের আওয়াজ তুলে ‘অভয়’টা ঠিক তখনই এসে দাঁড়াল দোরগোড়ায়। আসরাফুলের সংশয় অবশ্য কাটছে না। বিড়বিড় করছেন, ‘‘কার কথা যে শুনি!’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দোলের সকালে জনা বিশেক কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান নিয়ে পথে পথে ঘুরছিলেন জিয়াগঞ্জের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী। সঙ্গে মহকুমা পুলিশ অফিসার বরুণ বৈদ্য। চায়ের দোকান, মাচার আড্ডায় থেমে থেমে ছড়িয়ে যাচ্ছেন সেই হারানো অভয়।
ভারী বুটের আওয়াজে চায়ের দোকান অবশ্য খালি হয়ে যাচ্ছিল। সাত সকালে কে আর অযথা ধমক-ধামকের সামনে পড়তে চায়!
‘সব্বনাশ’ বলে দোকানের পিছন দিয়ে ছেলে-ছোকরারা দৌড় মারতে শুরু করলে তাঁদের হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়েছিল বিডিও।
‘‘আরে বাই, ভয়ের কিচ্ছু নেই আমরা মারব-ধরব নাকি!’’
তার পর ধীরে ধীরে তাঁদের ভুঝিয়েছেন— ‘‘আমাদের ভয় নেই, শুধু জানতে এসেছি এ বার আর কেই ভয় দেকাচ্ছে না তো!’’
পাল্টা প্রশ্মনটা উড়ে এসেছিল তখনই— ‘‘ভয় দেখালে তাদের নাম আপনাদের সামনে করি আর রাতে এসে তারা আমাদের ‘শিক্ষা’ দিয়ে যাক আর কি!’’
বিডিও বোঝান, ‘‘অপনারা পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে পরিচয় গোপন রাখা হবে। আমরা আছি ভয়ের কোনও কারন নেই। কে কি বলেছে বলুন?’’ এ-ওকে ঠেলাঠেলি করে, নাম আর মুখে আনে না কেউ।
তবে, বৃহস্পতিবার লালবাগ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় রুট মার্চ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের অভয়-বাণীতে রইল প্রতিশ্রুতি— ভোট দেওয়া নিয়ে ভয়ের কোনও কারন নেই। বাসিন্দারা নিজের ভোট নিজেই দিন। কেউ ভয় দেখালে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানান। এলাকায় ফ্লাইং স্কোয়াডের গাড়ি ঘুরছে সেখানেও অভিযোগ জানাতে পারবেন। ভোটার দের সুবিধার জন্য ১৯৫০ হেল্প লাইন নম্বর খোলা রয়েছে। সেখানে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন। যদি অভিযোগকারী তার পরিচয় গোপন রাখতে চান তাহলে সেটাও গোপন রাখা হবে। অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে’’
লম্বা ফিরিস্তি। তবে ভয়ের একটা মৃদু হাওয়া রয়েই যাচ্ছে।
জমাট বাঁধা ভিড় থেকে অনেকেই জানিয়ে দিলেন, গত ভোটের মতো এ বারও ‘ঠান্ডা শাসানি’ এ বারও ঘুরতে শুরু করেছে গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা সুশীল হালদারের কথায়, ‘‘গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের সময় ভোট দেওয়ার আগের দিনই তো বলল, ভোট নাকি হয়ে গিয়েছে আমাদের। এ বার ওঁদের কথায় একটু বল পেলাম।’’ সেই বল-ভরসা কতটা স্বস্তি শেষতক বয়ে আনবে, তা দেখারই অপেক্ষা এখন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy