Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Madhbyamik Exam

মুখ ফেরাচ্ছে ছাত্রেরা

উত্তরটা খুঁজতে আরও এরৃক বার জেলার গাঁ-গঞ্জে খোঁজ নেওয়া যাক—  প্রায় শিল্পহীন জেলা মুর্শিদাবাদ। নদী-নালায় ঢাকা সে জেলায় কৃষি আঁকড়ে বেঁচে থাকা মানুষ হালে আবাদেও আর মন দিতে পারছেন না যেন।

পাড়ি: ভিন্ রাজ্যের পথে কিশোর, যুবকেরা। ফাইল চিত্র

পাড়ি: ভিন্ রাজ্যের পথে কিশোর, যুবকেরা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৬
Share: Save:

মাধ্যমিকে ছাত্রীদের ঢল নেমেছে মুর্শিদাবাদে। গত দু’বছরের ধারা ধরে রেখেই এ বারও ছাত্রদের তুলনায় পরীক্ষার্থীর পরিসংখ্যানে ছাত্রীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তার একটা কারণ, শিক্ষা আধিকারিক থেকে প্রশাসনিক কর্তা, সকলের কাছেই রয়েছে। তবু, প্রশ্নটা ঘুরে ফিরে উঠছে, বহরমপুরে একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে নিজের মেয়েকে পৌঁছে দিয়ে এক মহিলা বিড়বিড় করছিলেন, ‘ছেলেগুলো সব পড়া ছেড়ে দিল নাকি!’

উত্তরটা খুঁজতে আরও এরৃক বার জেলার গাঁ-গঞ্জে খোঁজ নেওয়া যাক— প্রায় শিল্পহীন জেলা মুর্শিদাবাদ। নদী-নালায় ঢাকা সে জেলায় কৃষি আঁকড়ে বেঁচে থাকা মানুষ হালে আবাদেও আর মন দিতে পারছেন না যেন। কৃষি দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বছরে দু’টো দান আর আনাজ, এতে আর তেমন লাভের মুখ দেখছেন না সাধারন কৃষিজীবী মানুষ। তাই পরের প্রজন্ম যে মাঠ আঁকড়েই পড়ে থাকবে, এমন সম্ভাবনা নেই। তাই জমি থেকে মুখ ফেরাচ্ছে অনেকেই।’’

রুজির টানে তাই ঘরের ছেলে পড়ায় ইতি টেনে কাঁচা টাকার হাতছানিতে পাড়ি দিচ্ছে ভিন জেলায় কখনও বা ভিন প্রদেশে, এমনই দাবি করছেন শ্রম দফতরের এক কর্তা। তাঁর ব্যাখ্যা— ‘‘জেলায় শিল্প বলতে বিড়ি। তা সীমাবদ্ধ নির্দিষ্ট একটা এলাকায়। সেখানে মাখা গলাবার জো নেই জেলার অন্য এলাকার সদ্য তরুণদের। তাই জেলা ছাড়ছে তারা।’’

মুর্শিদাবাদের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক শিক্ষা) খোন্দকার আশরাফুল সামিম বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী-সহ নানা প্রকল্পের কারণে মেয়েরা স্কুলমুখী হচ্ছে। উল্টোদিকে গরিব হওয়ার কারণে ছেলেদের একটা অংশ মাধ্যমিকের দু’এক বছর আগে থেকে স্কুলছুট হয়ে কাজের সন্ধানে ছুটছে। যার জেরে ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে।’’

এখন প্রশ্ন, পিছিয়ে থাকা জেলার তালিকায় মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি বাঁকুড়া-পুরুলিয়া কিংবা উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরও রয়েছে। সেখানে স্কুলছুট বা মাধ্যমিকে গন্ডিতে পা বাড়ানো ছেলেদের সংখ্যা কি কম?

জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে ৭৮ হাজার ১৩৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ হাজার ছাত্র, অথচ রাঢ়বঙ্গের ওই দু’টি জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা মুর্শিদাবাদের তুলনায় শতাংশের হারে বেশি। এ বারে মুর্শিদাবাদে যেখানে ৩৮.৪০ শতাংশ ছাত্র পরীক্ষা দিচ্ছে, সেখানে বাঁকুড়ায় ৪৪.৪৩ শতাংশ এবং পুরুলিয়ায় ৪৪.১৪ শতাংশ ছাত্র পরীক্ষা দিচ্ছে। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত বলছেন, ‘‘বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার সঙ্গে মুর্শিদাবাদকে মেলানো যাবে না। জেলার আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে মেয়েরা বাইরে কাজে যাওয়ার সুযোগ পেলে তারাও যেত।’’

জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এ ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। তাদের ব্যাখ্যা— এ জেলার মানুষের মানসিক গঠন অন্যরকম। শিক্ষার তুলনায় রোজগার তাদের কাছে অনেক কাম্য। স্বল্প বয়সে কাঁচা টাকার হাতছানিতে তাই স্কুল-পাঠ শিকেয় তুলে ছেলেদের অনেকেই ভেসে পড়ছে রুজির টানে। হরিহরপাড়ার গোবিন্দপুর রাজনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনকুমার শাসমল বলেন, ‘‘অধিকাংশ ছাত্র প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ফলে বাড়িতে পড়াশোনার তেমন চল না থাকায় আগ্রহ হারাচ্ছে। বাড়িতেও তা নিয়ে তেমন চাপ দেওয়া হয় না। একটু বড় হলেই পড়া ছেড়ে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Exam Madhyamik 2020 Male Candidate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE