Advertisement
১১ মে ২০২৪

হাতানো জমি দিয়ে সরকারি ক্ষতিপূরণ, ধৃত

জমির আসল মালিকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ গত বুধবার চাকদহের রাওতাড়া পঞ্চায়েত এলাকার শিমুরালি চৌমাথা অঞ্চল থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। এঁরা হলেন যথাক্রমে মধুসূদন রায়, মহসিন মণ্ডল ও দিলীপ বিশ্বাস।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

মনিরুল শেখ 
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

জালিয়াতি করে অন্যের জমি দখল করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। দখলদারেরা সেই জমিই আবার সরকারকে চাকদহের পাওয়ার গ্রিড বসানোর জন্য দিয়েছিলেন। বিনিময়ে পেয়েছিলেন সরকারি ক্ষতিপূরণ।

জমির আসল মালিকের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ গত বুধবার চাকদহের রাওতাড়া পঞ্চায়েত এলাকার শিমুরালি চৌমাথা অঞ্চল থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। এঁরা হলেন যথাক্রমে মধুসূদন রায়, মহসিন মণ্ডল ও দিলীপ বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার তাঁদের কল্যাণী মহকুমা আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে চেয়ে বিচারকের কাছে আর্জি জানানো হয়। বিচারক শেষ পর্যন্ত ধৃতদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কর্তারাও ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘জাল নথি বানিয়ে যাঁরা জমিটি সরকারকে দিয়ে ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন তাঁদের নোটিস পাঠিয়ে টাকা ফেরত চাওয়া হবে। আর সেই টাকা জমির আসল মালিক গৌরাঙ্গবাবুকে দেওয়া হবে। দখলদারেরা টাকা ফেরত দিতে না চাইলে আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’ কিন্তু এই ডামাডোলে এলাকায় সরকারের পাওয়ার গ্রিড বসানোর কাজ ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও জমির প্রকৃত মালিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘জমিটা নীচু ছিল। সরকার আমাকে ক্ষতিপূরণ দিলেই আমি পাওয়ার গ্রিডের জন্য জমি ছেড়ে দেব।’’

কল্যাণী আদালতের আইনজীবী শ্যামলকুমার সরকার জানান, চাকদহে বেশ কয়েক বিঘে জমি ছিল অনন্তকুমার দেবনাথের। তিনি প্রায় তিন দশক আগে মারা যান। তার পর তাঁর ছেলেরা জমির দেখভালের দায়িত্ব দেন ফকিরচাঁদ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে। বেশ কয়েক বছর আগে অনন্তবাবুর ছেলে গৌরাঙ্গের কাছ থেকে ওই জমির একাংশ কিনে নেন ফকিরচাঁদ। জমির কিছুটা কিনলেও ফকিরচাঁদ নানা কথায় গৌরাঙ্গকে ভুলিয়ে তাঁর কাছ থেকে গোটা জমির দলিলটি নিয়ে নেন। তবে তখনও গৌরাঙ্গবাবুরা আঁচ করতে পারেননি যে, সেই দলিল জাল করে তলে তলে পুরো জমিটিই ফকিরচাঁদ ও তাঁর দলবল নিজেদের নামে করে নিয়েছেন। ওই জমির রেকর্ড পর্যন্ত তাঁরা নিজেদের নামে করিয়ে নেয় বলে অভিযোগ গৌরাঙ্গবাবুর। তবে ফকিরচাঁদ এত কিছু করার পরেও অম্লানবদনে ওই জমিতে ভাগচাষ করতেন। গৌরাঙ্গকে ফসলের ন্যায্য ভাগও দিতেন। জালিয়াতির ঘটনা গৌরাঙ্গবাবুরা জানতে পারেন প্রায় ২ বছর পরে। যখন তাঁরা দেখেন, পাওয়ার গ্রিডের জন্য ওই জমি দিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে গিয়েছেন ফকিরচাঁদ ও তাঁর দলবল।

এরপরই গৌরাঙ্গবাবু চাকদহ থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁর আইনজীবী শ্যামলবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশ বিষয়টি প্রথমে পাত্তাই দেয়নি। থানার কাছ থেকে সহযোগিতা না পেয়ে আমার মক্কেল ভূমি দফতরের একাধিক কর্তাকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানান।’’ জেলা ভূমি দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা তদন্ত করে দেখেছি, ওই জমির প্রকৃত মালিক গৌরাঙ্গবাবু-ই। জাল নথি তৈরি করে জমিটি নিজেদের নামে করে নিয়েছে ফকিরচাঁদ ও তাঁর লোকজন।’’ শ্যামলবাবু জানান, বিষয়টি গত বছরের অক্টোবরে কল্যাণী আদালতে লিখিত ভাবে জানানো হয়। এরপর আদালত চাকদহ থানাকে বিষয়টিকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করতে ও তদন্ত শুরু করতে নির্দেশ দেয়। সেই মতো পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে এবং তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Land Scam Government Com Kalyani
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE