Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নেশা নিয়েই যাই কবরে!

কেমোথেরাপি নেওয়ার পরে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সময়ে ফস করে ধরিয়ে ফেলেছিলেন বিড়ি। আর টান দিতেই শুরু হয়েছিল দমকে দমকে কাশি। পিছন থেকে ধকমটা উড়ে এসেছিল তখনই, ‘হাসপাতালে এসেও নেশা ছাড়তে পারলেন না চাচা!’

ধূমপানে জরিমানা। বহরমপুরে।

ধূমপানে জরিমানা। বহরমপুরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৯ ০৪:৫৮
Share: Save:

নেশা বয়ে এনেছিল যে রোগ, সে রোগের চিকিৎসা করাতে এসে ফের নেশায় পেয়েছিল তাঁকে!

কেমোথেরাপি নেওয়ার পরে বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সময়ে ফস করে ধরিয়ে ফেলেছিলেন বিড়ি। আর টান দিতেই শুরু হয়েছিল দমকে দমকে কাশি। পিছন থেকে ধকমটা উড়ে এসেছিল তখনই, ‘হাসপাতালে এসেও নেশা ছাড়তে পারলেন না চাচা!’

বিশ্ব ধূমপান বিরোধী দিবসে, জন পরিসরে সিগারেটে-বিড়ির ধোঁয়া কুণ্ডলি পাকিয়ে আকাশমুখো দেখলেই এ দিন দিনভর ছুটে এলেন তাঁরা, পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী। তারপর কেস সাজিয়ে জরিমানা কিংবা অনাদায়ে আটক। তবে, আবসার শেখের ন্যুব্জ অবস্থা দেখে স্বেচ্ছাসেবীরা জরিমানা চেয়ে চোখ রাঙাননি। বরং বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন তাঁকে। নদিয়ার করিমপুরের দোগাছির আবসারের বয়স মধ্য পঞ্চাশ। মাস ছয়েক হল ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ। বছর পঞ্চান্নর আবসার শুক্রবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে কেমো নিয়ে বিকেলে মোহনা বাস টার্মিনাসে এসেই ধরিয়ে ছিলেন বিড়ি। জনপরিসরে তামাক সেবন বিরোধী স্বেচ্ছাসেবকেরা ঘিরে ধরেছিলেন তখনই। আবসার ফিসফিস করে বলেন, ‘‘আর তো ক’টা দিন বাবা, ভাবলাম, না হয় নেশাটাকে নিয়েই কবরে যাই!’’ আবসারের কথায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী শবনম বিশ্বাস। বলেন, ‘‘ক্যান্সার হয়েছে, তাও বিড়ি খাচ্ছেন?’’ মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস অবাক হয়ে বলছেন, ‘‘ধূমপানের কুফল নিয়ে সারা জেলা জুড়ে এত প্রচার, এত কর্মসূচি, কিন্তু বিড়ি-সিগারেটের নেশা থেকে মুক্তি নেই যেন! রোজ তো আর ওঁদের চোখে চোখে রাখা সম্ভব নয়।’’

এ অবশ্য নতুন নয়, এত দিন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের স্বাস্থ্য কর্মীরাই মানুষকে সচেতন করতে পথে নামতেন। এ বার পুলিশকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন অভিযানটা শুরু হয়েছিল বহরমপুর স্টেশনে। আরপিএফের সঙ্গে যৌথভাবে ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। দিনভর ঘুরে পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের হাতে অবশ্য ধরা পড়েছেন সাকুল্যে সাত জন। মাত্র সাড়ে চারশো টাকা আদায় হয়েছে জরিমানায়। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে আইন কি শুধুই দিনের নিয়মরক্ষা? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের গলায় স্পষ্ট হতাশা, ‘‘মানুষ সচেতন না হলে কি করা যাবে, আমাদের চার পাশে কত আবসার শেখ যে ছড়িয়ে আছেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Smoking World Smoking Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE