ফেসবুকে সেনা নিয়ে পোস্ট দিয়ে কিছু ‘স্বঘোষিত দেশপ্রেমিক’-এর হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। রানাঘাট থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে তিনি পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানান। সোমবার কল্যাণীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তন্ময় সরকার নামে ওই যুবককে ডেকে পাঠিয়ে ছ’জনের নামে লিখিত অভিযোগ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে বিজেপির লোকজন ছিল বলে অভিযোগ। যদিও রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হানার পরেই ঘটনাটি ঘটে রানাঘাটের নাসরা এলাকায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থায় কর্মরত বছর ছাব্বিশের তন্ময় সেনা নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন। তার পর থেকেই তাঁকে গালিগালাজ করা হচ্ছিল, হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। দু’দিন ধরে এমনটা চলার পরে ১৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ শ’খানেক লোক তার বাড়িতে চড়াও হয়। তন্ময়ের অভিযোগ, প্রথমে তাকে গালিগালাজ করা হচ্ছিল। হুমকিও দেওয়া হতে থাকে। বেগতিক বুঝে তিনি রানাঘাট থানায় ফোন করেন। ফোন করতে দেখেই মারধর শুরু হয়ে যায়। তাঁর অভিযোগ, “এক জন মুখে ঘুষি মারে। চশমা ভেঙে যায়। বাবা-মা তুলেও কুৎসিত গালিগালাজ করতে থাকে।” তাঁকে ‘বন্দে মাতরম্’ ও ‘জয় হিন্দ’ বলানোর জন্যও চাপাচাপি চলতে থাকে।
খবর পেয়ে পুলিশ এসে তন্ময়কে উদ্ধার করে রানাঘাট থানায় নিয়ে যায়। তন্ময় লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘তার পরেও রানাঘাট থানা তা এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করেনি।’’ রানাঘাট থানার যুক্তি, শরীরে চোট-আঘাত না থাকায় অভিযোগটি ‘সাধারণ ডায়েরি’ হিসেবে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছিল। সে দিনই পুলিশ সুপারকেও লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছিলেন তন্ময়। এ দিন কল্যাণীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অংশুমান সাহা তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে নতুন করে অভিযোগ জমা নেন। তন্ময় নির্দিষ্ট করে ছ’জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, হামলাকারীদের মধ্যে বিজেপির চেনামুখ ছিল। তন্ময় বলেন, “পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যারা এসেছিল তাদের মধ্যে বিজেপির যুব মোর্চার রানাঘাট শহর সভাপতিও ছিলেন। তার নেতৃত্বেই এটা ঘটে।”
যুব মোর্চার সভাপতি শঙ্খ সাহা অবশ্য দাবি করেন, ‘‘ওই ছেলেটিকে আদৌ মারধর করা হয়নি। আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।’’ বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকারের ব্যাখ্যা, “দেশ ও সেনার বিরুদ্ধে আপত্তিকর একটি পোস্ট দেখে মানুষ খেপে গিয়েছিল। তারাই প্রতিবাদ করেছে। তবে আমাদের দলের কেউ ছিল না।” তন্ময় পাল্টা বলেন, “দেশকে ভালবাসি কি না, তার প্রমাণ ওদের কাছে দিতে হবে? ওরা কারা?”
জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “যারা জড়িত, তদের সকলের বিরুদ্ধে কড়া আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy