Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শব্দসন্ধ্যার ভাঁজ পুলিশের কপালে

বছর কয়েক আগেও কালী পুজোর সন্ধ্যায় শব্দ এবং দূষণ শব্দ দু’টি ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে থাকত। রাজ্য়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেষ্টায় সেই শব্দ-সন্ধ্যার উপরে একটা নিয়ন্ত্রণের ছায়া পড়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

বছর কয়েক আগেও কালী পুজোর সন্ধ্যায় শব্দ এবং দূষণ শব্দ দু’টি ওতোপ্রতো ভাবে জড়িয়ে থাকত। রাজ্য়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেষ্টায় সেই শব্দ-সন্ধ্যার উপরে একটা নিয়ন্ত্রণের ছায়া পড়েছিল। এ বার, শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সেই ফতোয়ার উপরে ফের একটা প্রশ্ন চিহ্ ঝুলে পড়েছে। নিয়ম মেনে রাত আটটা থেকে দশটা শব্ধ বাজি ছাড়পত্র পেয়েছে। এখন প্রশ্ন, শেই ‘নিয়ম’ কতটা মানা হবে, এবং ওই নির্দিষ্ট সময়সীমাও কতটা গ্রাহ্যের মধ্যে আনবে আম-শব্দপ্রিয় জনতা।

পুলিশের মাথা ব্যাথার কারণ এই দু’টিই— নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা এবং শব্দ বাজির দৌরাত্ম্য রাত দশটার পরেও অব্যাহত থাকবে কিনা।

এ কথা ভেবেই জেলা পুলিশ বিভিন্ন বাজি কারখানায় হানা দেওয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু এলাকায় নজরদারি শুরু করেছে। সাদা পোশাকেই ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে পুলিশকে। তবে তাতেও এই শব্দ-দাপট কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে জেলা পুলিশ মহলেই একটা চাপা আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আদালত রায় দিয়েছে বটে, তবে তা কতটা রক্ষা করা গেল কতটা মানা হল নিয়ম, তা খেয়াল রাখার দায়িত্ব পুলিশের। ফলে, আমাদের উপরে চাপটা আরও বেশি। হয়ত চ্যালেঞ্জের।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘নিয়ম না মেনে বাজি পোড়ালে ব্যবস্থা নেওয়া হবেই। নিষিদ্ধ শব্দবাজি বন্ধ করতে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিজ়শ কর্মী। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা

নেওয়া হবে।’’

কিন্তু অভিযোগ না পেলে? প্রশ্নটা উঠছে এ কারনেই, রাজনৈতিক আশ্রয়পুষ্ট ক্লাবের ছেলেপুলেরা যে শব্দ বাজি ফাটাবেন, তা কতটা নিয়ম মেনে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দ্বিতীয়ত তা প্রায় ‘অত্যাচারের’ পর্যায়ে গেলেও অভিযোগ জানানোর সাহস দেখাবেন ক’জন! গ্রামবাসীদের অনেকেই তাই বলছেন, ‘‘পুলিশ ‘অভিযোগ পাইনি’ বলে দায় এড়ানোর সুযোগ পাবে, আর দেদার শব্দ বাজি কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ফাটবে।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তাই কবুল করছেন, ‘‘শব্দবাজির আড়ালে যে বোমাবাজিও হবে না কে বলতে পারে! এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অনেকেই গন্ডগোলও পাকাতে পারে।’’ তা হলে?

পুলিশ সুপার অবশ্য বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে তল্লাশি চালিয়ে ইতিমধ্যেই প্রচুর নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। শুধুমাত্র অক্টোবর মাসে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ও শব্দবাজির উপকরণ রাখার জন্য ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার শব্দবাজি এবং প্রায় ৮ কুইন্টাল বিস্ফোরক। এ ব্যাপারে ১২টি মামলাও করা হয়েছে। নভেম্বর মাসেও নিষিদ্ধ শব্দবাজির বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া পুজোর দিন বাসিন্দারা থানায় ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন। জেলা পুলিশের মোবাইল অ্যাপস ‘আলোর পথে’ অভিযোগ জানানো যেতে পারে। এমনকি জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে- ০৩৪৮২-২৫০৫১১ নম্বরে অভিযোগ জানানো যেতে পারে নির্ভয়ে।’’

বহরমপুরের বাসিন্দা সৌমি রায়মল্লিক বলেন, ‘‘বাজির দাপটে ছোট থেকে বড় সকলেই সমস্যায় পড়েন। খুব সমস্য়া হয় রাস্তার কুকুরগুলির। বাড়ির পোষা কুকুরটিকর দিকে তাকানো যায় না। বেচারা এ ঘর থেকে ও ঘরে ছুটে বেড়ায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sound Pollution Police Fire Cracker Sound Cracker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE