Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুযোগ পেলে কে আর ছাড়ে!

বেসরকারি কিছু কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গ্রামীণ মানুষের সেই উৎকণ্ঠার সুযোগ নিয়ে ভোটার বা আধার কার্ডে সংশোধনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা টাকা। কোথাও বা রীতিমতো ঠকিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আদ্যন্ত ভুয়ো কার্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাস্তায় নেমে এমনই অভিজ্ঞতা জেলা প্রশাসনের। 

জন্ম-শংসাপত্রে নাম ঠিক করতে দীর্ঘ লাইন বহরমপুর পুরসভায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

জন্ম-শংসাপত্রে নাম ঠিক করতে দীর্ঘ লাইন বহরমপুর পুরসভায়। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

কারও উদ্বেগ তো কারও উল্লাস!

ভোটার তথ্য যাচাই প্রক্রিয়াকে নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি’র ছায়া ভেবে মানুষ যখন মরিয়া হয়ে সরকারি দফতরে হত্যে দিয়েছেন, তখন বেসরকারি কিছু কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গ্রামীণ মানুষের সেই উৎকণ্ঠার সুযোগ নিয়ে ভোটার বা আধার কার্ডে সংশোধনের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা টাকা। কোথাও বা রীতিমতো ঠকিয়ে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আদ্যন্ত ভুয়ো কার্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাস্তায় নেমে এমনই অভিজ্ঞতা জেলা প্রশাসনের।

দিন কয়েক আগেও যে কম্পিউটার সেন্টার দিনভর মাছি তাড়াত, সেখানেই এখন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ততা। একটা কম্পিউটার সঙ্গে একটি প্রিন্টার আর সাবেক মডেলের একটা ল্যামিনেশন মেশিন— এই ত্রয়ী সম্বল করে এনআরসি’র আবহে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই সব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি। অন্য দিকে সাধারণ মানুষ, দিন-রাত ভুলে নাওয়া-খাওয়া শিকেয় তুলে ভোর থেকে রাত, লম্বা লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকছেন এমনই কিছু কম্পিউটার সেন্টারে। অনেক সময় সার্ভার ডাউনের গেরোয় পড়ে রাতটাও কাটিয়ে দিচ্ছেন সেই সব সেন্টারের বাইরে।

ডোমকলের এক কম্পিউটার সেন্টারের মালিক আইনুল হকের গলায় তাই অনুকম্পা, ‘‘সাধারণ মানুষের অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে। কিন্তু কী করব বলুন, বুধবার রাতে সার্ভার ডাউন ছিল, অনেকেই দোকানের সামনে রাতভর বসে ছিলেন।’’ বাবলাবোনা এলাকার এক বৃদ্ধ প্রায় রাত দুটো পর্যন্ত বসেছিল তার ভোটার কার্ড সংশোধনের জন্য।

এই আতঙ্কের সুযোগ নিচ্ছে কিছু কম্পিউটার সেন্টার। ডোমকলের মাঝপাড়া এলাকায় একটি সেন্টারে টাকা ফেললেই যাবতীয় শংসাপত্র, পরিচয়পত্র থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স বিলোচ্ছে অকাতরে। শংসাপত্রে ব্লক থেকে জেলা সব স্তরের প্রয়োজনীয় আধিকারিকদের যাবতীয় সিল সেখানে নকল করা হয় বলেও বুক বাজিয়েই বলছেন সেন্টারের মালিক। তার কথায়, ‘‘ধার দেনা করে দু’টো কম্পিউটার কিনে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এনআরসি যেন রুজির দরজা খুলে দিয়েছে!’’

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘জালিয়াতি চলছে না এমন নয়, তবে খবর পেলে আমরাও ছুটছি। কাজ বেড়ে গিয়েছে!’’

বছর পাঁচেক আগেও ডোমকল সীমান্ত উজিয়ে বাংলাদেশি মানুষ এসে কিছু টাকা খরচ করে হাতে গরম ভোটার কার্ড তৈরি করে নিত এই সব সেন্টারে। রুজির সেটাই ছিল একমাত্র উপায়। রানিনগরে শেখপাড়া থেকে এক সেন্টার মালিককে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তবে ব্যবসা বন্ধ হয়নি।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘জলঙ্গির জোড়তলায় যে বাংলাদেশি যুবককে নকল ভোটার কার্ড সমেত ধরা হয়েছিল তার তপ্ত কার্ডটা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল— নিশ্চয় কাছাকাছি কোথাও নকল কার্ড তৈরি হচ্ছে।’’

দু’পা হাঁটতেই বিদুপুর বাজারে মিলেছিল তেমনই এক কম্পিউটার সেন্টার। গ্রেফতার করা হয়েছিল সেই সেন্টারের মালিককে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRC Murshidabad Domkol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE