Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘পড়াশোনা করে যে, গুলি খেয়ে মরে সে’, বন্‌ধ-সন্ধ্যায় পথে পড়ুয়ারা

তবে চমকে যেতে হচ্ছে কচি হাতে ধরে থাকা পোস্টার দেখে— ‘পড়াশোনা করে যে, গুলি খেয়ে মরে সে।’ বুধবার বিজেপি’র ডাক দেওয়া বনধের বিকেলে, নওদার সর্বাঙ্গপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের এমনই স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা বুকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় হাঁটাল স্কুলেরই এক শিক্ষক।

পড়ুয়াদের মিছিলে হাঁটালেন শিক্ষক । নিজস্ব চিত্র

পড়ুয়াদের মিছিলে হাঁটালেন শিক্ষক । নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১১
Share: Save:

পিঠে ব্যাগটুকুই নেই। স্কুলের পোশাক, গুটি-গুটি হাঁটার ধরন, ব্যাজার মুখ— বরং অসময়ে স্কুলে যাওয়ার বিরক্তিটুকু আষ্টেপৃষ্টে লেপ্টে রয়েছে তাদের মুখে।

তবে চমকে যেতে হচ্ছে কচি হাতে ধরে থাকা পোস্টার দেখে— ‘পড়াশোনা করে যে, গুলি খেয়ে মরে সে।’ বুধবার বিজেপি’র ডাক দেওয়া বনধের বিকেলে, নওদার সর্বাঙ্গপুরের একটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের এমনই স্পষ্ট রাজনৈতিক বার্তা বুকে প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় হাঁটাল স্কুলেরই এক শিক্ষক। সুপ্রিম কোর্টের নিষেধ সত্ত্বেও, খুদে পড়ুয়াদের রাজনীতির-রাস্তায় এমন করে হাঁটাচ্ছেন কি করে? ‘জনকল্যাণ সঙ্ঘ আদর্শ বিদ্যাপীঠের’ শিক্ষক নীতিশ বিশ্বাসের জবাব, ‘‘ওটা মৃত ছাত্রদের আত্মার শান্তি কামনায় মিছিল। সেখানে বিজেপির কোন পতাকা বা স্লোগান ছিল না।’’

তবে ওই ঘটনা জানাজানির পরে নীতিশবাবুকে স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে শো-কজ করা হয়েছে। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা জয়শ্রী মণ্ডল বলেন, ‘‘সে দিন বনধ ছিল। স্কুলে তো কোন ছাত্র আসেনি। তবে, জেলা শিক্ষা দফতর বিষয়টি জানে, তারাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’’খোলা রাস্তায় একটি রাজনৈতিক দলের স্বপক্ষে ওই মিছিল করানোয় গ্রামের মানুষজনও ক্ষুব্ধ। ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের অনেকেই অবশ্য বলছেন, ‘‘নীতিশ স্যার প্রায় জোর করেই ওদের নিয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন স্কুলের অনুষ্ঠান আছে।’’

এক অভিভাবকের দাবি, ‘‘নীতিশ স্যার তো বাড়ি এসে রীতিমতো হুমকি দিয়ে গেছিলেন, মিছিলে না গেলে নম্বর কম দেওয়া হবে বলে।’’ তবে, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে ঘটনার অভিযোগ পেয়ে বলেন, ‘‘ঘটনার কথা জানতে পেরে শিক্ষাদফতেরর কর্মীরা শুক্রবার ওই স্কুলে গিয়েছিল। ওই শিক্ষককে শো-কজ করা হয়েছে।’’

ইসলামপুরে ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে বুধবার রাজ্য জুড়ে ১২ ঘন্টার বনধের ডাক দিয়েছিল বিজেপি। নীতিশবাবুর সঙ্গে কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের ‘সম্পর্কের’ কথা জানা না গেলেও ওই মিছিল যে বনধের সমর্থনে তা নিয়ে সংশয় নেই কারও। স্থানীয় গ্রামবাসীদের দাবি, ‘‘দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও শিশুদের রাজনৈতিক মিছিলে ওই শিক্ষক হাঁটালেন কোন সাহসে!’’

ওই শিক্ষকের যুক্তি, ‘‘সে দিন সন্ধ্যায় মোমবাতি মিছিল ছিল। সেখানেই পড়ুয়ারা হেঁটেছে তবে স্কুলের পোশাকে নয়। ওটা বিজেপি’র মিছিলও ছিল না। আর ফ্লেক্সে কি লেখা ছিল আমি দেখিনি।’’ ছবি অবশ্য সে কথা বলছে না। সেখানে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, নীতিশের তৎপরতাতেই স্কুলের পোশাক পরে ছেলে-মেয়েরা হাঁটছে। তাদের গায়েও স্কুলের পোশাক। তা হলে রাজনীতির গন্ধ নেই?

বিজেপি’র জেলাপরিষদ প্রার্থী বিজয় মণ্ডলের কথায় তা স্পষ্ট ‘‘ওই মিছিলে আমিও হেঁটেছি। নীতিশবাবুও হেঁটেছেন। এর মধ্যে সমস্যা কোথায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rally Student Strike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE