Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পড়ুয়াদের উদ্যোগে ৪০টি পরিবারের পড়ুয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় খাতা, পেন, পেনসিল, স্লেট

টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বই উপহার দুঃস্থদের

শান্তিপুরের বিবেকানন্দনগরের বিবেকানন্দ হাইস্কুলে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় সেবা প্রকল্পের শিবির।

দেওয়া হল বই-খাতা। নিজস্ব চিত্র

দেওয়া হল বই-খাতা। নিজস্ব চিত্র

সম্রাট চন্দ
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০০
Share: Save:

স্কুলে তখন জাতীয় সেবা প্রকল্পের শিবির চলছে। শিবিরে অংশ নেওয়া স্কুল-পড়ুয়ারা হাজির হল শিক্ষকদের ঘরে। তাদের আর্জি, “স্যর, আজকের টিফিন আমাদের দিতে হবে না। তাঁর বদলে টিফিনের জন্য যে টাকা বরাদ্দ আছে তা দিয়ে দুঃস্থদের খাতা, পেন কিনে দিতে চাই আমরা।”

এমন কথা শুনে প্রথমেই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। তার পরেই মুগ্ধ হয়েছিলেন পড়ুয়াদের মহৎ চেষ্টায়। আর দেরি করেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন পড়ুয়াদের সহযোগিতা করার। পড়ুয়াদের এক দিনের টিফিনের টাকাতেই এলাকার কিছু দুঃস্থ পড়ুয়ার খাতা, পেন, পেনসিল, স্লেট ইত্যাদি কেনা হয়। হাতে সে সব পেয়ে আপ্লুত হয় আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ওই ছাত্রছাত্রীরা।

শান্তিপুরের বিবেকানন্দনগরের বিবেকানন্দ হাইস্কুলে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় সেবা প্রকল্পের শিবির। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই স্কুলে জাতীয় সেবা প্রকল্পের বাহিনী তৈরি হয়েছে। একাদশ শ্রেণির ১০০ জন পড়ুয়া আছে এই দলে। স্কুলের পাশেই গোবিন্দপুর মাঠপাড়া গ্রাম। সেখানকার বেশ কিছু পরিবারের দারিদ্র আগেই নজরে এসেছিল পড়ুয়াদের। নিজেদের শিবিরে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ থেকে শুরু করে সাপের ছোবল মরনোত্তর চক্ষুদান- সহ নানা বিষয়ে সচেতনতা চালাচ্ছিল তারা। তখনই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, ওই দরিদ্র, অসহায় পরিবারগুলির শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর।

সারাদিনের শিবিরে তাদের জন্য টিফিন বরাদ্দ রয়েছে। তাতে শুকনো খাবারের পাশাপাশি আছে ভাত, ডাল, তরকারি, ডিম। এক দিন সেই টিফিন না খেয়ে টিফিনের টাকা দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার সামগ্রী কেনাতে ব্যয় করার কথা ভাবে তারা। স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া ধৃতব্রত সরকার, শালিনী মণ্ডলেরা বলে, “আমাদের স্কুলের কাছেই ওই গ্রামটা। সেখানে অনেক ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। কিন্তু পরিবারের অবস্থা ভাল নয়। বইখাতা, পেন কিনতে পারে না। আমরা তাই সিদ্ধান্ত নিই এক দিনের টিফিনের টাকা দিয়ে ওদের পাশে যতটা পারি দাঁড়াব।”

টিফিনের টাকায় কিনে ফেলা হয় খাতা, পেন। ৪০টি পরিবারের পড়ুয়াদের হাতে সেগুলো তুলে দেওয়া হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অতনু চৌধুরী বলেন, “ছেলেমেয়েরা যে এ ভাবে ভেবেছে সেটা আমদের একটা বড় পাওনা।” স্কুলের জাতীয় সেবা প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পল্লব সরকারের কথায়, “সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পড়ুয়াদের সমাজের জন্য কাজ করার কথা বলি আমরা। সেটা মনে রেখে ওরা এগিয়ে এসেছে দেখে ভাল লাগছে।” স্কুলের সহকারী শিক্ষক আশিস নন্দীর মন্তব্য, “বয়সে ছোট হলেও ওদের এই কাজ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Shantipur Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE