Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bus Accident

ছেলে ফেরেনি, মা বসে দুয়ার আগলে

বছর দুয়েক আগে ঘটেছিল সেই মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনা। মাঝখানে এতগুলো দিন পেরিয়ে গেলেও শোক ভুলতে পারেননি পরিবারের লোকজন, পাড়া-পড়শিরা।

ছেলের ছবি হাতে প্রদ্যুত চৌধুরীর বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র

ছেলের ছবি হাতে প্রদ্যুত চৌধুরীর বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র

কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৩
Share: Save:

বছর দুয়েক আগে ঘটেছিল সেই মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনা। মাঝখানে এতগুলো দিন পেরিয়ে গেলেও শোক ভুলতে পারেননি পরিবারের লোকজন, পাড়া-পড়শিরা। ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারির সকালে করিমপুর থেকে মালদহগামী যাত্রী-সহ এক সরকারি বাস মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদের কাছে বালিরঘাট সেতু ভেঙে নদীর জলে পড়ে গিয়েছিল। মারা গিয়েছিলেন চল্লিশেরও বেশি মানুষ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাল ফিরেছিল দৌলতাবাদের সেই সেতুর। কিন্তু ক্ষত সারেনি স্বজনহারানো পরিবারগুলির।

সে দিন মৃতদের মধ্যে ছিলেন আনন্দপল্লির জয়শ্রী চক্রবর্তী (২৮), বিভূতিভূষণ স্বর্ণকার (৫২), সুন্দলপুর গ্রামের সঞ্জয় সরকার (৪০), রুম্পা প্রামাণিক ( ৩০), দেব প্রামাণিক (১০), রুপালী মণ্ডল (৪৫), সুনিতা মণ্ডল (৩৫), বিকাশচন্দ্র বিশ্বাস (৫০), আশমত শেখ (৪৯), দাড়ের মাঠ গ্রামের বিকাশচন্দ্র বিশ্বাস (৫০), করিমপুরের নাটনার বাসিন্দা মলয় বিশ্বাস (৩৫) ও প্রদ্যুত চৌধুরী (৪০) ও মুরুটিয়ার কেচুয়াডাঙার মানস পাল (৩০)। যাঁদের অনেকেই স্কুলের শিক্ষকতা করতেন। কেউ আবার চিকিৎসার জন্য বা ব্যবসার কাজে যাচ্ছিলেন।

আজও প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় ছেলের ঘরে ফেরার আশায় বাড়ির সদর দরজার দিকে চেয়ে থাকেন মানসের মা অসুস্থ মায়া পাল। মানসের বাবা জয়দেব পাল জানান, নিজের কোনও জায়গাজমি নেই। একমাত্র ছেলেকে খুব কষ্ট করে লেখা পড়া শিখিয়েছিলেন। স্নাতক পাশ করার পরে ২০১০ সালে মানস টিউশন করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। তাঁকে দিনমজুরের কাজ করতে বারণ করেছিলেন। শেষে ২০১৩ সালে সুতি ব্লকের ফতুল্লাপুর শশিমণি উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরি পেয়েছিলেন। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেন আর সোমবার সকালে বাড়ি থেকে বেরোতেন। দুর্ঘটনার মাস দশেক আগে ছেলের বিয়ে হয়েছিল। মানসের পরিবারের লোকজন জানান, মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে গিয়েছেন। কিছু সরকারি সাহায্য মিললেও খুব কষ্টে দিন কাটছে তাঁদের।

ছেলের কথা মনে পড়লে দেওয়ালে ঝোলানো ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে কেঁদে চলেন প্রদ্যুত চৌধুরীর মা। করিমপুরের নাটনায় প্রদ্যুতের বাড়ি। ছেলের ছবি হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর মা কল্যাণী জানান, সে দিন যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলেন, ক’দিন পরেই আবার ফিরে আসবেন। ফেরা তাঁর হয়নি। বাড়ি থেকে বের হওয়ার ঘণ্টা তিনেক পরেই দুঃসংবাদটি এসেছিল। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটেছিলেন। তাঁকে খুঁজতে সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে গিয়েছিল। রাতভর তল্লাশি করেও প্রদ্যুতের খোঁজ মিলেছিল না। পরের দিন সকালে প্রদ্যুতের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। প্রদ্যুত সাগরদীঘির গৌরীপুর হেমাজুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ২০০৬ সালে কোচবিহারে প্রথম চাকরি পেলেও দু’বছর পরে এই স্কুলে চলে এসেছিলেন। এখন তার বাড়িতে বাবা মা ছাড়াও রয়েছেন স্ত্রী তাপসী চৌধুরী বিশ্বাস ও দশ বছরের ছেলে।

প্রদ্যুতের বাবা প্রভাস বলেন, “ছোট্ট নাতিটা তো কোনও দিন তার বাবাকে দেখতে পাবে না। ওকে বোঝানোর মতো ভাষা আমাদের নেই।”

মৃতদের স্মরণে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় করিমপুরের নাটনার গ্রামবাসীরা মোমবাতি নিয়ে মৌনী মিছিল করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bus Accident Death Balirghat Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE