ছবি: সংগৃহীত।
ভাঙন বিধ্বস্ত ফরাক্কার হোসেনপুর চরে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি পালন করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতারা। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের বঞ্চনার অভিযোগ সামলাতে গিয়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হল তাঁদের। অভিযোগে, অভিযোগে জেরবার হয়ে দলের নেতাদের একাংশও শেষতক মেনে নিয়েছেন, ভাঙন কবলিত হোসেনপুরের বাসিন্দাদের ক্ষোভের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
ফরাক্কায় থেকেও হোসেনপুর যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। মালদহের কালিয়াচক ৩ ব্লক পেরিয়ে ওই গ্রামে যাতায়াত করতেই দিন কাবার হয়ে যায়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিন ধরে দোরে দোরে ঘুরে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ কমাতে দিদির সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য তাঁদের ফোন নম্বরও দিয়ে এসেছেন নেতারা। সেই মতো ওই নম্বরে ফোনও করেন পাখি সরকার নামে গ্রামেরই এক যুবক।
পাখি বলছেন, ‘‘নেতাদের কথা মতো ওই ফোন নম্বরে ফোন করেছিলাম। এক জন মহিলা ফোন ধরে সব শুনলেন। তার পরে ফরাক্কার এক তৃণমূল নেতার নাম করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন। ব্যস, ফল বলতে এটুকুই।”
ফরাক্কার ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বাবলু ঘোষ বলছেন, ‘‘চরের বাসিন্দা ওই যুবক ফোন করেছিলেন। তাঁকে আমার নাম করে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আমরা বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখেছি, গ্রামের লোকজন খুব কষ্টে আছেন। স্পার বাঁধিয়েও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।’’
বাবলুবাবু জানান, গত বছর ৭১টি এবং এ বছর ২০টি বাড়ি নদী ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। ঘরহারাদের কেউ অন্যের জমিতে চালা করে আছেন। কেউ চাটাইয়ের ঘর করে কোনও ভাবে বাস করছেন। সরকারি সাহায্য বলতে একটি করে ত্রিপল ও কয়েক কিলো চাল পেয়েছেন তাঁরা। তার পর ওই গ্রামে কোনও প্রশাসনিক কর্তার পা পড়েনি। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি।
তিনি বলেন, “ওই ৯১টি পরিবারকে সরকারি জমিতে ঘর তৈরি করে পুনর্বাসন দেওয়া দরকার। এ নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গেও কথা বলব। চরে বহু লোক বার্ধক্য ও বিধবা ভাতাও পান না। কী ভাবে তা পাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় দেখা হবে তাও। গ্রামবাসীদেরও সকলকেই বলেছি ‘দিদিকে বলো’-র নম্বরে ফোন করে তাঁদের দুর্দশার কথা জানাতে।”
গ্রামের বাসিন্দা সেনকা মণ্ডলের স্বামী দিনমজুর। গত বছর আশ্বিনে নদীর চার মিটার দূরে থাকা ঘর ধসে যাওয়ার পরে উঠে এসেছেন গ্রামের শেষ প্রান্তে। চাটাই দিয়ে তৈরি করেছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। সেনকা বলছেন, “যার জমি সে এখন বলছে উঠে যেতে। রবি শস্যের চাষ করবে। কিন্তু কোথায় যাব, বলুন তো? তৃণমূলের নেতারা এসেছিলেন। সব দেখেশুনে গিয়েছেন।”
পাশেই পারুল মণ্ডলের বাড়ি। বাড়ি বলতে চাটাইয়ের বেড়া আর মাথার উপরে টিন। তিনি বলছেন, “সামান্য জায়গায় পাঁচ জন আছি। শৌচকর্মের জন্য ভরসা মাঠ। অথচ নিজের বাড়িতেই এক দিন সব ছিল।”
সুকুমার মণ্ডল কয়েক পুরুষ ধরে রয়েছেন হোসেনপুর চরেই। তিনি বলছেন, “তখন নদী ছিল অনেক দূরে। পাকা দালান ছিল। গ্রামেই সাত বিঘেরও বেশি জমি ছিল। সব গিলে খেল নদী। বছরে ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় এক জনের জমিতে টিনের ঘর তৈরি করে আছি। কেউ কোনও সাহায্য করেনি। কথা রাখেনি সরকারি বাবুরাও।”
সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব নিবারণ মণ্ডলও। তিনি বলছেন, “এক বছর আগে ভাঙনের সময় সরকারি কর্তারা এসেছিলেন। এসেছিলেন সব দলের নেতারাও। ভেবেছিলাম, সাহায্য মিলবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।’’
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে ছিলেন ফরাক্কা পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি আঞ্জুমারা খাতুনও। তিনিও বলছেন, “৯১ টি পরিবার ভাঙনে সর্বস্ব খুইয়ে এখন পরের জমিতে চাটাইয়ের ঘর করে রয়েছেন এক বছর ধরে। তাঁদের আগে ঘর দেওয়াটা দরকার। দিদিকে বলে যদি একটু সাহায্য মেলে এই ভরসায় তাকিয়ে আছে গোটা গ্রাম। তাকিয়ে আছি আমরাও।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy