বাসা: হোমে জুলেখা। নিজস্ব চিত্র
পিছনে পড়ে রইল আত্মীয়-পরিজন। অভিভাবক বলতে প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডল। তাঁকে চোখের জলে বিদায় দিয়ে বহরমপুর পঞ্চাননতলা রেলগেট লাগোয়া সরকারি হোমের গেট পেরিয়ে ঢুকে গেল জুলেখা খাতুন। মঙ্গলবার থেকে তার ঠিকানা ‘শিলায়ন হোম’।
জুলেখা ‘অনাথ’ নয়। কিন্তু কম বয়সে বিয়ে করে হেঁশেল ঠেলার বদলে পড়তে চাওয়ায় আপনেরা পর করেছে তাকে। বাবা-মা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। গত ডিসেম্বর থেকে লালবাগের সিঙ্গার হাইস্কুলে জীববিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে ঠাঁই নিয়ে মাধ্যমিক দিয়েছে সে।
এ বার পরের ধাপে যাওয়ার পালা। জেলা প্রশাসন ঠিক করেছে, জুলেখা মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলে তাকে বহরমপুর কাশীশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হবে। তাই শিলায়ন হোমে অন্য ছাত্রীদের সঙ্গেই তাকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ঘরে সে থাকছে সেখানে তিন জন উচ্চ মাধ্যমিক এবং ৯ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রয়েছে। কাশীশ্বরী স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়া ছয় ছাত্রীর ছাড়াও বহরমপুর গার্লস কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী রয়েছেন। গত বছর ওই হোম থেকে দু’জন মাধ্যমিক এবং এক জন প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন।
জুলেখার ইচ্ছে ছিল, নিজের স্কুলে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার। কিন্তু তা হলে হোমে থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না। সিঙ্গার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন ওর আর্থিক ভার বহন করছিল। তা বেশি দিন সম্ভব নয় জানতে পেরেই ওকে হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুলে থাকায় ওর নিরাপত্তা নিয়েও আমরা
চিন্তিত ছিলাম।’’
জুলেখাকে হোমে পাঠানোর কথা তার পরিবারকে জানানোর চেষ্টা করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেউ ফোন ধরেনি। রাতে বাড়িতে ফোন করা হলে জুলেখার বাবা রফিকুল শেখ ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, ‘‘কেন বারবার বিরক্ত করছেন? বিয়ে ভেস্তে দিয়ে ও আমাদের মুখ পুড়িয়েছে। এখন হোমে যাচ্ছে, সে ব্যাপারেও আমরা কিছু জানি না। জুলেখা বলে আমাদের কোনও মেয়ে নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy