ছেলের অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র
ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে প্রায়ই বাড়িতে ফোন করতেন—‘আর কয়েকটা দিন, ট্রেন চালু হলেই ফিরে যাব, দেখ। আর কোনও দিন ভিন রাজ্যে কাজে আসব না।’ শনিবার সকালেও সুতির বালিয়াঘাটির বাড়িতে স্ত্রী খাইরুন বিবির কাছে তেমনই একটা ফোন এসেছিল, ‘‘১৭ তারিখের পরেই ট্রেন ছাড়বে, ফিরছি এ বার!’’ সেই শেষ। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই উড়ে এসেছিল আরও একটি ফোন, কেরলে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক সফিকুল শেখের মৃত্যু সংবাদ— বাজারে গিয়েছিলেন আনাজ কিনতে। ভিড় দেখে পুলিশ আচমকা লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করলে পালাতে গিয়ে ট্রাকের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন সরিফুল। রোজা রেখে ক্লান্ত খইরুল ফোন পেয়েই জ্ঞান হারান।
কেরলের ভাইলানচেরি নামে ছোট্ট এক গঞ্জে গ্রামের অন্য রাজমিস্ত্রিদের সঙ্গে এ বছরও কাজে গিয়েছিলেন সরিফুল। লকডাউন শুরু হতে, গ্রামের আরও অন্তত জনা ত্রিশ শ্রমিকের সঙ্গে সেখানেই আটকে পড়েছিলেন। তাঁর দাদা হাফিজুর বলেন, “ওঁর সঙ্গেই ছিল খুড়তুতো ভাই ওয়াসিম। ফোনে সেই জানায়, রাত ৮টা নাগাদ আনাজ কিনতে বাজারে গিয়েছিল। বাজারে তখন তুমুল ভিড়। সেই ভিড় সরাতেই লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে পুলিশ। পালাতে গিয়েই রাস্তার উপরে দুর্ঘটনা, ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।’’ স্ত্রী খাইরুন বলছেন, “প্রতি বার রোজার মুখেই বাড়ি ফিরে আসতেন। এ বারও তেমনই ঠিক ছিল। লকডাউনেন সব হিসেব ওলট পালট হয়ে গেল।’’
রুজির টানে ভিন রাজ্যে গিয়ে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের সিংহভাগেরই ঠিকানা মুর্শিদাবাদ। সাইকেলে-পায়ে হেঁটে সদ্য চালু হওয়া বিশেষ ট্রেনে তাঁদের অনেকেই গ্রামে ফিরলেও, ফেরা হল না অনেকেরই।
সেই তালিকায় আরও একটি সংযোজন শমসেরগঞ্জের বকুল শেখ (২৪)। ওড়িশার শোনপুর এলাকার সিংহিযুবা এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন বকুল। ফিরতে না পেরে কয়েক দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তাঁর পারিবারিক সূত্রে খবর, শনিবার শোনপুরের স্থানীয় প্রশাসন জানায়, শৌচালয়ে পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছেন বকুল। কেন, কী করে এই দুর্ঘটনা স্পষ্ট হয়নি কিছুই। ময়নাতদন্ত না হলে এর বেশি কিছুই জানা যাবে না বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে।
এ দিনই, কেরলের এর্নাকুলম থেকে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে সড়কপথে ‘লাশ’ হয়ে ডোমকলের গ্রামে ফিরছেন আসিফ ইকবাল মণ্ডল। সঙ্গে তাঁর ভাই আনোয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy