Advertisement
০৭ মে ২০২৪
মাধ্যমিক ২০১৫

এক জেলায় বাড়ল ছাত্রী-সংখ্যা, অন্যটিতে কমে গেল পরীক্ষার্থীই

সংখ্যায় ছাত্রদের টেক্কা দিচ্ছে ছাত্রীরা। মুর্শিদাবাদের মতো পিছিয়ে থাকা জেলায় এমন ঘটনাকে অত্যন্ত শুভ লক্ষণ বলেই মনে করছেন জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তারা। জেলায় ৭৬ হাজার ৯৮৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৭১ জন। অর্থাৎ ৫৭ শতাংশ। তুলনায় ছাত্র সংখ্যা ৩২ হাজার ৯১৫ জন। অর্থাৎ মোট পরীক্ষার্থীর ৪৩ শতাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৪
Share: Save:

সংখ্যায় ছাত্রদের টেক্কা দিচ্ছে ছাত্রীরা।

মুর্শিদাবাদের মতো পিছিয়ে থাকা জেলায় এমন ঘটনাকে অত্যন্ত শুভ লক্ষণ বলেই মনে করছেন জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তারা। জেলায় ৭৬ হাজার ৯৮৬ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৭১ জন। অর্থাৎ ৫৭ শতাংশ। তুলনায় ছাত্র সংখ্যা ৩২ হাজার ৯১৫ জন। অর্থাৎ মোট পরীক্ষার্থীর ৪৩ শতাংশ। গত বছরও ৬৪ হাজার ৮৯৩ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ২৫২ জন। জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক পূরবী বিশ্বাস দে-র মতে, “এ বারে সেই সংখ্যা এক ধাপে ১৪ শতাংশ বেড়েছে। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলায় এটা অত্যন্ত শুভ লক্ষণ।”

পূরবীদেবীর সংযোজন, “সর্বশিক্ষা মিশন, মিড ডে মিল, কন্যাশ্রী-সহ বিভিন্ন প্রকল্প চালু করার ফলে জেলায় মানুষের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ যে বেড়েছে, এটা তারই প্রমাণ।” সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক দুলাল দত্ত অবশ্য বলেন, “মাধ্যমিকে ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা চলে আসছে প্রায় ১০ বছর ধরে। এটা বাম আমলেরই সাফল্য। গ্রামাঞ্চলে স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তার পরিকাঠামো গড়ে তোলারই সুফল মিলছে এখন।”

তবে ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা সম্পর্কে জেলায় সচেতনতা বৃদ্ধিকেই কৃতিত্ব দিতে চেয়েছেন শ্রীকান্তবাটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল মণ্ডল। তিনি বলেন, “আমার স্কুল থেকে এ বার ৪০৭ জন মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তার ৬৫ শতাংশই ছাত্রী। শুধু তাই নয়, স্কুলের সমস্ত ক্লাসেই ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। এদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের শির্ক্ষাথী। পরীক্ষার ফলেও তারা ছেলেদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।”

এ দিকে এ বারের মাধ্যমিকে রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে মুর্শিদাবাদ জেলা কোঅর্ডিনেটর করা হয়েছে তৃণমূল শিক্ষা সেলের জেলা সভাপতি শেখ ফুরকানকে। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনচার্জদের নিয়ে রঘুনাথগঞ্জ শ্রীকান্তবাটি হাই স্কুলে একটি বৈঠকে তিনি বলেন, “পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় এ বারে জেলায় গত বছরের চেয়ে ৮টি পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে।” পূরবীদেবী বলেন, “এ বারে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু সোমবার থেকে। মুর্শিদাবাদে ১১৪টি প্রধান পরীক্ষাকেন্দ্র ও ২৭টি উপ পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে।”

মুর্শিদাবাদ যখন মাধ্যমিকে ছাত্রী সংখ্যা বাড়ায় উচ্ছ্বসিত, তখন পড়শি জেলা নদিয়ায় গত বছরের তুলনায় মোট পরীক্ষার্থী সংখ্যা এ বছর আচমকা কমেছে। জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭৩ হাজার ৮৭ জন। সেখানে এ বার ছাত্রদের থেকে প্রায় হাজার দেড়েক বেশি ছাত্রী পরীক্ষায় বসলেও মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৫৫৮। ৪১টি প্রধান পরীক্ষাকেন্দ্র-সহ এ বছর জেলার মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ১৮০টি। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নদিয়া জেলা আহ্বায়ক প্রশান্ত দে বলেন, “প্রতি বছরই পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ বারও বৃদ্ধি পাবে ধরে নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়েছিলাম। কিন্তু এ বছরই দেখছি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গিয়েছে।”

এ বার হঠাৎ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেল কেন তা নিয়ে রীতিমতো ধন্দে নদিয়া জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তারা। জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) কৌশিক রায় বলেন, “এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কম। কেন এমন হল তা এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। বিষয়টি আমরা পর্যালোচনা করব।”

নিজেদের মতো করে এই পরীক্ষার্থী কমার কারণ খুঁজছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মাজদিয়া রেলবাজার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন মণ্ডল বলেন, “সাধারণত দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ পরিবারেই এখন একটি করে সন্তান। সেটা একটা কারণ স্কুল পড়ুয়ার সংখ্যা কমার। দিন দিন তার প্রভাব মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাগুলিতেও পড়ছে।” তা ছাড়া সাফল্য আসলে স্কুলের সুনাম। সে কারণে নামী স্কুলগুলিতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় কিছুটা কড়াকড়িও শুরু হয়েছে বলে স্কুল সূত্রের খবর। তারই ফলে হয়ত মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। কোনও কোনও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনে করছেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ স্কুলগুলিতে অল্প হলেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তা ছাড়া দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের কাজের সন্ধানে মাঝ পথে পড়া থামানোর বাধ্যতার কাহিনী সকলের জানা।

যদিও প্রশান্তবাবুর দাবি, “বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ভোকেশনাল প্রশিক্ষণে হাতে কলমে কাজ শেখার জন্য অনেক পড়ুয়া সে দিকেই বেশি করে ঝুঁকছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার থেকেও তারা ওই কোর্সকেই বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনে এটাও একটা কারণ বলে মনে হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik exam student murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE