Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঠাঁই নেই বইমেলায়, অভিনব প্রতিবাদ বহরমপুরে

প্রায় একমাস আগে বইমেলা কর্তৃপক্ষের কাছে স্টল চেয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘অজ্ঞাত’ কোনও কারণে মুর্শিদাবাদ জেলা বইমেলায় তাঁকে স্টল দেওয়া হয়নি। আর সেই ‘অবিচারের’ প্রতিবাদ করতে তিনি ধর্না বা অবস্থান বিক্ষোভের মতো চেনা ছকে হাঁটেননি।

অনল আবেদিন
লালগোলা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৭
Share: Save:

প্রায় একমাস আগে বইমেলা কর্তৃপক্ষের কাছে স্টল চেয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু ‘অজ্ঞাত’ কোনও কারণে মুর্শিদাবাদ জেলা বইমেলায় তাঁকে স্টল দেওয়া হয়নি।

আর সেই ‘অবিচারের’ প্রতিবাদ করতে তিনি ধর্না বা অবস্থান বিক্ষোভের মতো চেনা ছকে হাঁটেননি। বহরমপুরের প্রকাশনা সংস্থা ‘আকাশ’-এর কর্ণধার অভিজিৎ রায় বেছে নিয়েছেন একেবারে অভিনব পথ। অভিজিৎবাবু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বইমেলার ক’দিন নিজের প্রকাশনা সংস্থার বই তিনি পৌঁছে দেবেন ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি। ইতিমধ্যে ছাপানো প্রচারপত্র বিলি করেছেন তিনি। ফেসবুকেও সেই প্রচারপত্র ‘পোস্ট’ করেছেন।

মেলায় বই কিনলে শতকরা ১০ টাকা ছাড় দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অভিজিৎ ছাড় দিচ্ছেন শতকরা ২০ টাকা। ‘আকাশের’ ডাকে পাঠককুলের সাড়াও মিলতে শুরু করেছে। প্রচারপত্র দেখে বুধবার ওই প্রকাশনা সংস্থার দফতরে গিয়ে বহরমপুরের এক ক্রেতা ৫টি বই কিনেছেন। বাড়িতে ২টি বই পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য বহরমপুর শহরের অন্য এক ক্রেতা আগাম বরাত দিয়েছেন।

গত বুধবার থেকে বহরমপুর ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে শুরু হয়েছে ৩৪তম মুর্শিদাবাদ জেলা বইমেলা। চলবে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক তথা জেলা বইমেলা কমিটির সচিব প্রবোধ মাহাত বলেন, “এ বারের বইমেলার প্রস্তাবিত বাজেট ১৮ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। ৭ দিনের বইমেলায় রয়েছে ১৯০টি স্টল। তার মধ্যে ১৮১টি বইয়ের স্টল। বাকি ৯ টি স্টল কম্পিউটারের জন্য।”

অথচ বহরমপুরের দু’টি প্রকাশনা সংস্থা ‘আকাশ’ ও ‘শিল্পনগরী’র কপালে কোনও স্টল জোটেনি। আকাশের বয়স প্রায় দেড় দশক। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫৬। তার মধ্যে ১৯টি বইয়ের বিষয় মুর্শিদাবাদ। লেখকরাও সকলে এই জেলারই। শিল্পনগরীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৫। প্রকাশকের দাবি, প্রত্যেকটি বইয়েরই বিষয় মুর্শিদাবাদ। লেখকরাও মুর্শিদাবাদ জেলার। নিজের জেলা নিয়ে লেখকদের লেখা বইপত্রের বিশেষ কাটতিও থাকে জেলা বইমেলায়। ফলে স্বাভাবিক কারণেই জেলা বইমেলার দিকে বছরভর তাকিয়ে থাকে জেলার প্রকাশনা সংস্থাগুলি। এ বারও ব্যতিক্রম হয়নি। অথচ এই দুই প্রকাশনা সংস্থা স্টল চেয়ে মাসখানেক আগে বইমেলা কমিটির কাছে আবেদন করলেও তাদের স্টল দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

মুর্শিদাবাদ জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক তথা জেলা বইমেলা কমিটির সচিব প্রবোধ মাহাত বলেন, “সবাইকে স্টল দিতে হলে বইমেলার আয়তন আরও বাড়াতে হত। কিন্তু কোথাও তো থামতে হয়। তাই ১৯০টি স্টল করা হয়েছে।” বঞ্চিত প্রকাশনা সংস্থাগুলির প্রতি প্রবোধবাবুর বার্তা, “ক্ষুদ্র পত্রপত্রিকার জন্য বিনা ভাড়ায় ১০০ বর্গ ফুটের একটি স্টল দেওয়া হয়েছে। যে প্রকাশনাগুলি স্টল পায়নি তাঁরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই স্টলে বিনা ভাড়ায় বসতে পারে।”

সেই প্রস্তাব অবশ্য প্রত্যাখান করেছেন অভিজিৎবাবু। তিনি বলেন, “সফল বইমেলা করতে হলে কমিটিতে রাখতে হয় সুশিক্ষিত, সংস্কৃতিমনস্ক ও প্রকাশনা বিষয়ে বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজনদের। কিন্তু এ বারের বইমেলা কমিটিতে এ সবের বড়ই অভাব। সেই দৈনতার কারণে আমাদের কপালে স্টল জোটেনি। তাতে জেলা বইমেলার উদ্দেশ্যই খর্ব হয়েছে।”

আকাশের অভিনব প্রচারপত্র হাতে পেয়ে বহরমপুর শহরের বাসিন্দা সাধন সিংহ ফোনে বুধবার যোগাযোগ করেন ওই প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে। সাধনবাবু বলেন, “বইমেলায় শতকরা ১০ টাকা ছাড়। আর আকাশের কাছে মিলছে ২০ টাকা ছাড়। তাই এখান থেকেই আমি ৫টি বই কিনেছি। বইগুলি মুর্শিদাবাদ জেলা সংক্রান্ত।” বহরমপুরের রমা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই লিফলেট হাতে পেয়ে বেশ ভাল লেগেছে। বাড়িতে বসেই বই মিলবে, ভাবা যায়! লিফলেটের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে ‘রামেন্দ্রসুন্দর জীবনচরিত’ ও ‘প্রশ্নোত্তরে মুর্শিদাবাদ’, এই দু’টি বইয়ের অর্ডার দিয়েছি।”

এ ভাবেও প্রতিবাদ করা যায়! আকাশ করে দেখাল। দেখল বহরমপুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book fair murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE