তখন-চাট-বিক্রি: রাস্তার ধারে ব্যস্ত মুকেশ। নিজস্ব চিত্র
বিকেল থেকে রাত অবধি পানশালার অদূরে দাঁড়িয়ে ঝালমুড়ি, আলু-চাট বিক্রি করে সে। রাতে বাড়িতে পৌঁছে ‘খানা পাকানো’র কাজে হাত লাগায়। তারপর গভীর রাতে লণ্ঠনের আলোয় জেগে পড়াশুনা। ভোরে উঠে ঝালমুড়ি, আলু-চাটের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে স্কুলে যায়। এ ভাবেই জীবনযুদ্ধ চালিয়েও মাধ্যমিকে ৫৪ শতাংশ পেয়েছে শিলিগুড়ির কুলিপাড়ার মুকেশ কুমার শা।
শিলিগুড়ির মহানন্দা সেতু লাগোয়া দেশবন্ধু হিন্দি হাই স্কুলের ছাত্র মুকেশের লড়াইকে কুরনিশ জানিয়েছেন এলাকার কাউন্সিলর রামভজন মাহাতো। কাউন্সিলর বলেন, ‘‘যত বাধাই আসুক না কেন, অদম্য ইচ্ছে থাকলে যে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়, তারই দৃষ্টান্ত মুকেশ। আমরাও ওর পাশে আছি। ও চাইলে সবরকম সহযোগিতা করব।’’
মুকেশ ও তার দাদা জয়প্রকাশ কিন্তু কারও সাহায্যের ভরসা বসে থাকতে রাজি নয়। কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া দাদা জয়প্রকাশ বাবার মৃত্যুর পরে নিজেই সংসারের হাল ধরেছে। ওঁদের বাবা ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের এয়ারভিউ মোড়ের পানশালা লাগোয়া ফুটপাতে। জয়প্রকাশ জানান, সে ক্লাস টেনে পড়ার সময়েই বাবার মৃত্যু হয়। নিজে ঝালমুড়ি বিক্রি করে পড়াশোনা চালিয়েছে। ভাইকেও পড়িয়েছে। এখন রাতে কলেজে বাণিজ্য বিভাগে পড়ে। দিনের বেলায় একটি বেসরকারি অফিসে কাজও করেন তিনি। জয়প্রকাশ বলেন, ‘‘বাবা নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি। তাই কষ্ট করেও স্কুলে পড়িয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল আমরা পড়াশুনা করি। কারও কাছে হাত পাতেননি তিনি। আমরাও অযথা কারও কাছে হাত পাততে যাব না। পরিস্থিতি কঠিন হলেও, আমরা পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই।’’
এবার মাধ্যমিকে মুকেশ পেয়েছে ৩৭৯। হিন্দি ও ইতিহাসে ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। জীবন বিজ্ঞান ও ভূগোলে ৬০ শতাংশের বেশি। মুকেশ বলল, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভাল করার চেষ্টা করব। তবে আর-একটু বেশি সময় পেলে ভালই হত। রাতে পড়ার সময়ে খুব ঘুম পায়। চোখেমুখে জল ছিটিয়ে ফের পড়তে বসি। ঘুম থেকে উঠেই তো আলু সেদ্ধ করা, মশলা তৈরি করে রান্নায় হাত লাগাতে হয়। তার পরে স্কুলে যাওয়া।’’ এর পরে মুকেশ লাজুক হেসে জানায়, স্কুলে অনেক সময়েই ক্লাসে চোখ জড়িয়ে যায় যে! ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়কিশোর পাণ্ডে বলেন, ‘‘রাত জেগে পড়তে হয়। মুকেশের লড়াইটা সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy