Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ক’টা ভোট দিলে ঘর পাবেন? প্রশ্ন বৃদ্ধার

মেখলিগঞ্জ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকারী পাড়া থেকে তালের ডাঙা যাওয়ার রাস্তার ধারে ভাঙা একটি ঘরে দুই নাতনি, ছয় বছরের অপর্ণা ও আট বছরের সুস্মিতাকে নিয়ে থাকেন সন্ধ্যা।

অপেক্ষা: ভাঙা ঘরের সামনে সন্ধ্যা। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: ভাঙা ঘরের সামনে সন্ধ্যা। নিজস্ব চিত্র

সজল দে
মেখলিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:০৪
Share: Save:

তিনি মেখলিগঞ্জ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। দুই নাতনিকে নিয়ে থাকেন ভাঙা ঘরে। পুরনাগরিক হওয়ায় যে সমস্ত সুবিধা পাওয়ার কথা তাঁর, কোনওটিই পান না বলে অভিযোগ। তাই লোকসভা ভোট নিয়ে যখন সর্বত্র জোরদার প্রচার চলছে, তখন ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির সত্তর পেরনো সন্ধ্যা সরকারের প্রশ্ন, আর ক’টা ভোট দিলে সরকারি ঘর পাবেন তিনি। কবে বিদ্যুৎ পৌঁছবে তাঁর বাড়িতে এবং খোলা মাঠে আর শৌচকর্ম করতে হবে না!

মেখলিগঞ্জ পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকারী পাড়া থেকে তালের ডাঙা যাওয়ার রাস্তার ধারে ভাঙা একটি ঘরে দুই নাতনি, ছয় বছরের অপর্ণা ও আট বছরের সুস্মিতাকে নিয়ে থাকেন সন্ধ্যা। এলাকার সকলে দাসী বুড়ি নামেই চেনেন তাঁকে। জানালেন, স্বামী নিতাই সরকার এক সময়ে বাদাম বিক্রি করতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পরে সন্ধ্যাদেবী লোকের বাড়িতে ঠিকা কাজ শুরু করেন। ওই সামান্য উপার্জন থেকেই ধূপগুড়ির জলঢাকা এলাকায় একমাত্র মেয়ে সুচিত্রার বিয়ে দেন। এর পর থেকে একাই থাকতেন সন্ধ্যা। পরবর্তীতে দুই নাতনিকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। এখন তাদের নিয়েই দিন কাটছে বৃদ্ধার। আর ভরসা বলতে বার্ধক্য ভাতার টাকা। বৃদ্ধা জানালেন, বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। নেই জলের উৎস ও শৌচাগারও। সন্ধ্যা নামতেই অন্ধকার নেমে আসে ঘরে। অন্যের বাড়ি থেকে জল এনে তবে রান্নাবান্না হয়। আর এ দিকে শৌচাগার না থাকায় এখনও এই ‘নির্মল’ মেখলিগঞ্জে খোলা মাঠেই শৌচকর্ম সারতে হয় তাদের।

সন্ধ্যা বললেন, ‘‘সরকারি ঘরের জন্য কয়েক বার স্থানীয় কাউন্সিলর তথা বিদায়ী পুরবোর্ডের উপ পুরপ্রধানকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন বিশ্বাস, রমেন বিশ্বাস, সন্ধ্যারানি বিশ্বাসেরা জানালেন, বার্ধক্য ভাতা বাবদ যে টাকা পান বৃদ্ধা, তা দিয়ে চলে না তাঁর। মাঝেমধ্যেই প্রতিবেশীরা খাবার দেন। বেশি অসুস্থ হলে চলে যান মেয়ের বাড়ি। সেখানে কটা দিন কাটিয়ে আবার ভিটের টানে ছুটে আসেন। সরকারি ভাবে বৃদ্ধার জন্য ঘর, বিদ্যুৎ ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে জানান বাসিন্দারা। এ প্রসঙ্গে বিদায়ী উপ পুরপ্রধান অমিতাভ রায় বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পের ঘর পেতে নিজস্ব জমি প্রয়োজন। কিন্তু ওই বৃদ্ধাকে জমি সংক্রান্ত সমস্যার জন্য ঘর দেওয়া যায়নি। আর শৌচাগারের জন্য পুরসভায় নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমা দিতে হয়। বৃদ্ধা চাঁদা তুলে কিছু টাকা জোগাড় করেছিলেন, বাকি অর্থও তিনি দিয়েছিলেন। কিন্তু পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শৌচাগার পাননি তিনি।’’ পরবর্তীতে সন্ধ্যা যাতে ঘর ও শৌচাগার পান, সেই চেষ্টা করা হবে বলে জানান অমিতাভ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Old Woman Toilet Electricity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE