Advertisement
১০ মে ২০২৪
দোষীর শাস্তি চেয়ে স্মারকলিপি বিধায়ককে

গয়না কারিগরের থেকে অ্যাসিড নেয় অভী

মেধাবী ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সোনার গয়না পালিশ করার এক কারিগরের কাছ থেকে চার দিন আগে অভিযুক্ত অভী সাহা সালফিউরিক অ্যাসিড সংগ্রহ করে। মঙ্গলবার কোচবিহারের কলেজ থেকে ফেরার সময় আলিপুরদুয়ার শহরের এক নির্জন গলিতে ওই ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালায় সে।

ধৃত অভী সাহা।

ধৃত অভী সাহা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৩
Share: Save:

মেধাবী ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছোড়ার ঘটনায় অভিযুক্ত যুবককে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সোনার গয়না পালিশ করার এক কারিগরের কাছ থেকে চার দিন আগে অভিযুক্ত অভী সাহা সালফিউরিক অ্যাসিড সংগ্রহ করে। মঙ্গলবার কোচবিহারের কলেজ থেকে ফেরার সময় আলিপুরদুয়ার শহরের এক নির্জন গলিতে ওই ছাত্রীর মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালায় সে।

অ্যাসিডে জখম প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রী আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আলিপুরদুয়ারের জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথ বলেন, “অভী সাহাকে সাত দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তকে অ্যাসিড সরবরাহকারী সোনু হোসেনকে বুধবার বিকেলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আলিপুরদুয়ার থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।”

সরকারি আইনজীবী মহম্মদ রফি বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩২৬/এ ধারায় অ্যাসিড ছোড়া, ৩০৭ ধারায় খুনের চেষ্টা ও ৩৪১ ধারায় পথ আটকে দাঁড়ানোর ধারা দেওয়া হয়েছে।’’ এদিন আদালতে তোলার সময় অভী জানান, ওই মেধাবী ছাত্রীর সঙ্গে তার ৬-৭ বছরের সম্পর্ক। সম্প্রতি অন্য একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় রাগে সে অ্যাসিড ছুড়ে মেরেছে। তবে মেয়ের সঙ্গে ধৃতের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছেন অ্যাসিড হানায় জখম ছাত্রীটির মা। তিনি জানান, তাঁর মেয়েকে মাস দেড়েক ধরে উত্ত্যক্ত করছিল অভিযুক্ত।

সোনার গহনা পালিশের কারিগর সোনু হোসেন জানায়, অভীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব রয়েছে। দিন চারেক আগে এক রকম জোর করে অভী তাঁর কাছ থেকে অ্যাসিড নেয়। এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুবোধ সরকার জানান, সোনু হোসেনের বাবা এলাকায় একটি দোকান ঘর ভাড়া করে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সোনা পালিশের কাজ করেন। সম্প্রতি তিনি হুগলিতে চলে গিয়েছেন। বছর কুড়ির সোনু দোকান চালায়। সেই এসে অ্যাসিড কিনে নিয়ে যায় মাঝে মাঝে। তবে সেই অ্যাসিড বাইরের কারও হাতে দেবে তা তারা ভাবতে পারছেন না।

তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “ওই ছাত্রীর চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ওর দেখভালের কথা বলেছি।” জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার রেজাউল মিনজ বলেন, “আলিপুরদুয়ারের অ্যাসিড বার্ন ইউনিট নেই। মেয়েটির বাঁ চোখেও সমস্যা হচ্ছে। আমরা ওকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার কথা পরিবারকে বলেছি। তবে হাসপাতালে যাতে ওর কোনও রকম অসুবিধে না হয়, তা দেখা হচ্ছে।’’

জখম ছাত্রীর পাশে দাঁড়ালেন কোচবিহার এবিএন শীল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা। বুধবার দোষী যুবকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজ্যের বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান তথা নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে স্মারকলিপি দেন ওই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দেবনারায়ণ রায় বলেন, “অ্যাসিড হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমরা ওই ছাত্রীর পাশে রয়েছি। শিক্ষক প্রতিনিধিরা শীঘ্রই ওকে দেখতে যাবেন।”

এ দিন ওই কলেজের ১২৫ বছর পূর্তির স্মারক তোরণ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু। তাঁকে কাছে পেয়ে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের তরফে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কলেজে টাঙানো হয় প্রতিবাদ ব্যানার। তোরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অঘোষিতভাবে খানিকটা প্রকাশ্য প্রতিবাদ সভার চেহারা নেয়।

আজ বৃহস্পতিবার কলেজের পড়ুয়ারা মুখে কালো কাপড় বেঁধে কোচবিহারে মৌন মিছিল করবে বলে অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করা হয়। রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ইতিমধ্যে অভিযুক্ত যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এমন জঘন্য অপরাধ যে করেছে তার ফাঁসি হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।”

আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা ওই ছাত্রী প্রথম বর্ষে ইংরেজি অনার্স নিয়ে পড়ছেন। পড়াশোনায় মেধাবী ছাত্রীটি কলেজের সহপাঠীদের কাছেও রীতিমতো জনপ্রিয়। এই ঘটনায় হতচকিত হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি ওই ঘটনার জেরে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তা বেড়েছে ছাত্রীদের অনেকের।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE