Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Madhyamik Examination

কেমোর যন্ত্রণা ভুলে পরীক্ষা

স্বপ্ন, উচ্চশিক্ষার পরে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার।

লড়াকু: মিঠুন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

লড়াকু: মিঠুন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
গোয়ালপোখর শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণ-রোগ। অনটনের সংসারে চিকিৎসার টাকা জোগাড়ে বিক্রি হয়েছে প্রায় সব কিছুই। এমন প্রতিকূলতার সঙ্গেই লড়াই করে মাধ্যমিকে বসেছে মিঠুন মণ্ডল। তাঁর স্বপ্ন, উচ্চশিক্ষার পরে জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়া এলাহি বক্স হাইস্কুলের ছাত্র মিঠুন। ক্যানসারে আক্রান্ত সে। বাড়িতে নিত্যসঙ্গী অভাবও। কিন্তু জেদের কাছে হার মেনেছে সব। মাসখানেক আগেই কেমোথেরাপি দিয়ে এসেছে মিঠুন। সেই যন্ত্রণা এখনও রয়েছে। তা ভুলেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়েছে সে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মিঠুনের বাবা একজন প্রান্তিক কৃষক। মা গৃহবধূ। তিন ভাইয়ের মধ্যে মিঠুন ছোট। দুই ভাই ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করেন। বাড়িতে প্রবল অনটন। তারই মধ্যে ২০১৮ সালে মিঠুনের ‘ব্রেন ক্যানসার’ ধরা পড়ে। দরিদ্র ওই পরিবারে নেমে আসে আরও অন্ধকার। গত দু’বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলেছে তার। মিঠুনের পরিজনেরা জানান, ছেলের চিকিৎসায় জমি বিক্রি করে, ধার নিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেছেন জগনন্দ। মারণ-রোগের সঙ্গে লড়েই পড়শোনা চালিয়ে গিয়েছে। মিঠুন।

স্কুল সূত্রে খবর, ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল মিঠুনের। কিন্ত সে বছরেই তার মারণ রোগ ধরা পড়ে। দু’বছর ধরে চিকিৎসার পরে কিছুটা স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে মিঠুন। এক দিকে কেমোথেরাপির যন্ত্রণা ভুলেই মাধ্যমিকে বসেছে সে। স্কুলও তার পাশে দাঁড়ায়।

মিঠুন বলে, ‘‘রোগের সঙ্গে যত দিন পারব লড়ব, আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতেও লড়াই চালিয়ে যাব।’’

পাঞ্জিপাড়া এলাহি বক্স হাইস্কুলের শিক্ষক পঙ্কজ সিংহ বলেন, ‘‘মিঠুনের মনের জোর প্রচণ্ড। ওর সুস্থতা ও পরীক্ষায় সাফল্য কামনা করছি। একে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সবরকম ভাবে সাহায্য করা হবে।’’

স্কুল ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মিঠুনের মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে ৩৫ কিলোমিটার দূরের মনিভিটা হাইস্কুলে। সেই স্কুলের শিক্ষিকা পারমিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মিঠুনের পরীক্ষার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’

ছেলের লড়াইয়ে কত দূর পাশে থাকতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তায় জগনন্দ। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে ছেলের স্বপ্ন পড়াশোনা করে নিজের পায়ের দাঁড়ানো। কিন্ত ওই সেই স্বপ্ন কতটা সফল করতে পারব জানি না। চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমি বিক্রি করেছি। দেনাও অনেক। কিন্তু মারণ-রোগের সঙ্গে কী ভাবে লড়ব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Examination Cancer Patient Goalpokhar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE