সম্প্রীতি: একসঙ্গে সবাই। নিজস্ব চিত্র
হাতে হাত মিলিয়ে গণেশ পুজোর আয়োজন করলেন জয়ন্ত অধিকারী,আসিফ খান, ফাল্গুনি রায়, সামিম নওয়াজদের মতো একদল যুবক। কোচবিহার শহরের সুনীতি রোডের পাশে ‘উদ্ভব’ সংস্থার ব্যানারে ওই পুজো হয়। খরচ জোগাড় থেকে ভোগের আয়োজন, প্রতিমা নিয়ে আসা থেকে প্রসাদ বিলির মতো সব কাজই একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে করেছেন তাঁরা। গণেশ পুজোর ওই আয়োজন ঘিরে সম্প্রীতির এক অন্য এক ছবি দেখলেন বাসিন্দারা।
উদ্যোক্তাদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, শহরের সুনীতি রোডের ব্রাহ্মমন্দির লাগোয়া এলাকায় প্রায় নিয়ম করে সান্ধ্য আড্ডা, গল্পগুজবে মাতেন একদল যুবক। কেউ সমবয়সী, কেউ আবার সামান্য বড় বা ছোট। তবে বন্ধুত্বে খাদ নেই। নানা আলোচনা চলে মন খুলে। চায়ে চুমুকের ফাঁকে সেখানে এক সন্ধ্যায় গণেশ পুজোর প্রসঙ্গ ওঠে। সকলে মিলে পুজো করা যায় কি না, সেই প্রস্তাব দেন তাদেরই একজন। আড্ডার দাদা, বন্ধুরাও সবাই সন্মতি জানান। তার পরেই সেখানকার অন্তত ৩০ জন তরুণ মিলে পুজোর আয়োজনে নেমে পড়েন। আয়োজক সংস্থার নামকরণ, কমিটি গঠন করে ব্যানার সেঁটে প্রচার শুরু করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও পুজোর ব্যাপারে নিজেদের মতো করে প্রচার চালিয়েছেন তাঁদের অনেকে।
পুজো কমিটির সম্পাদক করা হয় আসিফ খানকে। আসিফ বলেন, “কমিটিতে বিভিন্ন পেশার সদস্য রয়েছেন। সবার সঙ্গেই পারস্পরিক বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দীর্ঘদিন সবাই একসঙ্গে রয়েছি। তবে সবাই মিলে গণেশ পুজোর আয়োজন এ বার প্রথম। দারুণ অনুভূতি।” কমিটির সভাপতি জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “শুধু পুজো নয়,এটা কিন্তু একটা সম্প্রীতির উৎসব।”
উৎসবের ওই আমেজ জমে ওঠে রবিবার রাতে কোচবিহার কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা নিয়ে আসার সময়ই। দুই সম্প্রদায়ের তরুণেরাই একসঙ্গে হইচই করে গাড়ি থেকে প্রতিমা নামিয়েছেন। ঢাকের তালেও মজেছেন। প্রতিমার সামনে সবাই মিলে একফ্রেম বন্দিও হয়েছেন হাসিমুখে।
সামিম বলছিলেন, “ ছোটবেলা থেকে এলাকার দুর্গোপুজোতেও তো আমি সামিল হই। আমরা তো সবাই এক দেশেরই নাগরিক।” পাশে দাঁড়ানো ফাল্গুনী মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেন,“ওদের ইদ উৎসবেও তো আনন্দ করি।”
উদ্যোক্তারা জানান, সোমবার পুজোর তদারকি, প্রসাদ , লাড্ডু বিলি থেকে অঞ্জলি পর্বেও পাশাপাশি ছিলেন সবাই। মঙ্গলবার পুজো উপলক্ষে কাঙাল ভোজনের পরিকল্পনাও রয়েছে। কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, কোচবিহারের সম্প্রীতির ঐতিহ্য বরাবরের। দুশো বছরের প্রাচীন রাস উৎসবের সূচনাও হয় বংশানুক্রিকভাবে মুসলিম পরিবারের তৈরি রাসচক্র ঘুরিয়ে। গণেশ পুজোর আয়োজনের মাধ্যমে নতুন মোড়কে সেই সম্প্রীতির বার্তা যেন আরও একবার ছড়াল। সাদামাঠা ঘরোয়া পরিবেশের আবহে ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ ধ্বনিও যেন নজরকাড়া হয়ে ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy