প্রতীকী ছবি।
বাইরে মেঘলা আকাশ, দু’এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। সোমবার ঘরের ভিতরে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলেন অর্জুন মাঝি। পরিবারের সদস্যরা জানালেন, গায়ে জ্বর কমেনি। জ্বরে আক্রান্ত অর্জুনবাবুর নাম সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছিল আগের দিন। তিনি কেমন আছেন জানতে সোমবার জলপাইগুড়ির তিস্তাপাড়ের বিবেকানন্দ পল্লির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল অর্জুনবাবু শুয়ে রয়েছে। চিত্র সাংবাদিক ক্যামেরা বের করতেই চাদর ছুঁড়ে লাফিয়ে উঠলেন তিনি। ধরা গলায় প্রায় আর্তনাদ করে বলে উঠলেন, “ছবি তুলবেন না, ছবি তুলবেন না। তুললে সমস্যা হবে।” তখন তাঁর গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ক্যামরা দেখে অর্জুনবাবু বলতেই থাকলেন, “আমার জ্বর নেই। কোনও সমস্যা নেই।” ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, জ্বরের কথা ক্যামেরার সামনে বললেই বাড়িতে এসে অনেকে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছেন।
পাড়া পড়শিরা জানালেন, সকালেই একদল লোক এসেছিলেন অর্জুনবাবুর বাড়িতে। তাঁর নাম লিখে নিয়ে গিয়েছে কাগজে। তাঁকে নানা পরামর্শও দিয়েছে। তারপর থেকেই অজুনবাবু মুষড়ে পড়েছেন বলে তাঁদের দাবি। যদিও অর্জুনবাবু বলেন, “কেউ আমাকে কিছু বলেনি। সব ঠিকই আছে।” জলপাইগুড়ি তিস্তা পাড়ের এই বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকার প্রায় সব বাড়িতেই জ্বরে আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তাঁদের কারও রক্ত সংগ্রহ করাও হয়নি বলে অভিযোগ। উল্টে সংবাদপত্রে যাদের নাম বেরোচ্ছে তাঁদের বাড়ি বয়ে এসে জ্বরের কথা পাঁচকান না করার ‘উপদেশ’ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি।
এ দিকে জ্বরের রোগীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর ওপর চাপ তৈরি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালেরই এক চিকিৎসকের কথায়, “এমনিতেই জ্বর হলে ডেঙ্গি হয়েছে কিনা তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভোগেন রোগীরা। তার উপর রোগ গোপন করতে হবে বললে বাড়তি মানসিক চাপ হবে।’’ যদিও জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘জ্বর গোপন করতে কেন বলা হবে, এমন কথা ঠিক নয়। ডেঙ্গি নিয়ে নতুন করে তেমন কোনও খবর নেই। সব ঠিকঠাক মতোই চলছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা ২৪ ঘণ্টাই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এ দিন রাজগঞ্জে ডেঙ্গি রুখতে সচেতনতা বাড়াতে কর্মশালাও হয়েছে।’’ তিনি নিজেও নাগরাকাটা সহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘ডেঙ্গি, জেই যাই হোক, নবান্নের নির্দেশ ছাড়া কখনও কোনও প্রশাসনিক কর্তারা তা জানাতে পারছেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy