Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ট্রাফিক কার্যালয়ে ভাঙচুর, ধৃত কংগ্রেস নেতা

ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও কর্তব্যরত এক হোমগার্ডকে মারধর করার অভিযোগে রায়গঞ্জ শহর কংগ্রেসের সহ সভাপতিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ধৃত নয়ন দাস।—নিজস্ব চিত্র।

ধৃত নয়ন দাস।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০২:১৭
Share: Save:

ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও কর্তব্যরত এক হোমগার্ডকে মারধর করার অভিযোগে রায়গঞ্জ শহর কংগ্রেসের সহ সভাপতিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও ধৃতের আইনজীবীর দাবি, জাতীয় সড়কে ট্রাক থামিয়ে পুলিশের তোলাবাজির প্রতিবাদ করাতেই পুলিশ ভাঙচুর চালিয়ে নয়নবাবুকে ফাঁসিয়েছে।

ধৃত কংগ্রেস নেতা নয়ন দাস শহরের সুদর্শনপুর এলাকার বাসিন্দা। নয়নবাবু রায়গঞ্জের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর শিল্পী দাসের স্বামী। সোমবার নয়নবাবুকে রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক সব্যসাচী চট্টরাজ তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে আগামী ৩ অগস্ট পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার রাত নটা নাগাদ হোটেল ব্যবসায়ী নয়নবাবু সুদর্শনপুর এলাকার বাড়ি থেকে মোটরবাইকে নিয়ে শিলিগুড়ি মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। জাতীয় সড়কে ওঠামাত্রই তিনি তীব্র যানজটে আটকে পড়েন।

প্রায় ১৫ মিনিট ধরে যানজটে আটকে থাকার পর তিনি বাইক রেখে প্রায় ৫০০ মিটার রাস্তা হেঁটে শিলিগুড়ি মোড় এলাকার ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ের দোতলায় ওঠেন। সেখানে নওয়াজ শেরিফ নামে এক হোমগার্ডকে মারধর করার পর একাধিক চেয়ার টেবিল উল্টে দেন বলে অভিযোগ। একটি চেয়ার, একটি টেবিল ফ্যান ও ওই বুথের কাচও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সেইসময় পুলিশ কর্মীরা তাঁকে আটকাতে গেলে নয়নবাবু তাঁদের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ।। রাতেই ট্রাফিক পুলিশের সহকারি সাব ইন্সপেক্টর জীবনকুমার বর্মন নয়নবাবুর বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার পর এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ এজলাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন নয়নবাবু। তিনি ঘন ঘন বমি করতে শুরু করেন। বিচারকের নির্দেশে এরপর তাঁকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতিতে কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকেরাই নয়নবাবুকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ নয়নবাবুর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, কর্তব্যরত অবস্থায় হোমগার্ডকে মারধর ও হুমকি দেওয়া-সহ সরকারি সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগের মতো একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে। সরকারি আইনজীবী নীলাদ্রী সরকার বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সাত বছরের কম সাজার মেয়াদের কোনও মামলার অভিযুক্তের জামিনের আবেদন মঞ্জুর হওয়াটাই নিয়ম। কিন্তু পুলিশ আদালতে তাঁদের উপস্থিতিতে নয়নবাবু অপরাধ করেছেন বলে দাবি করায় বিচারক তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন।’’

নয়নবাবুর আইনজীবী স্বরূপ বিশ্বাসের দাবি, জাতীয় সড়কে ট্রাক থামিয়ে পুলিশের তোলাবাজির প্রতিবাদ করতে নয়নবাবু রবিবার রাতে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘নয়নবাবু একজন রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় আতঙ্কে নিজেদের দোষ আড়াল করতে পুলিশকর্মীরা ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে নয়নবাবুকে ফাঁসায়। তিনি যে নির্দোষ তা প্রমাণ করতেই নয়নবাবু এরপর রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তীর সরকারি আবাসনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।’’ এদিন আদালতের লকআপে দাঁড়িয়ে নয়নবাবু দাবি করেন, ‘‘বেআইনি ট্রাক দাঁড় করিয়ে ট্রাফিক পুলিশের তোলাবাজির জেরে দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সড়কে যানজট লেগে রয়েছে। জেলা পুলিশের কর্তাদের সম্মতি ছাড়া এমন ঘটনা ঘটা অসম্ভব। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় শাসক দলকে খুশি করতেই পুলিশ আমাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাল।’’

জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজার পাল্টা দাবি, ‘‘আইন মেনেই নয়নবাবুকে গ্রেফতার করে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তিনি তা আমাকে না জানিয়ে এভাবে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সঠিক কাজ করেননি।’’

নয়নবাবুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সরব হয়েছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বও। তাঁর স্ত্রী কংগ্রেস কাউন্সিলর শিল্পীদেবী বলেন, ‘‘বিনা দোষে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসাল।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত ফোন ধরেননি। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের দাবি, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের একাংশ শিলিগুড়িমোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাক থামিয়ে তোলা আদায় করছেন। মাঝেমধ্যেই সন্ধ্যার পর জাতীয় সড়কে তীব্র যানজটের জেরে বাসিন্দা ও যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। নয়নবাবু একাধিকবার ট্রাফিক পুলিশের কর্তাদের কাছে বিষয়টি জানালেও কোনও লাভ হয়নি। তিনি ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। পুলিশ ষড়যন্ত্র করে তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসায়।’’

এ বিষয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। কেউ বেআইনি কাজ করলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ জাতীয় সড়কে কোনও বেআইনি কাজ করে কি না তা জেলা পুলিশের কর্তাদের খতিয়ে দেখার অনুরোধ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE