Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দু’সপ্তাহের লড়াই শেষ, মৃত্যু মাজিদের

কোচবিহার শহরের রাস্তায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে ঘিরে পরপর দু’টি গুলি চালায়। প্রথমটি না লাগলেও দ্বিতীয় গুলি পেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়।

শোকস্তব্ধ: মাজিদের দাদা

শোকস্তব্ধ: মাজিদের দাদা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:৩০
Share: Save:

দু’সপ্তাহ আগে কলেজ থেকে ফেরার পথে রাস্তার উপরে আক্রান্ত হন তিনি। বিকেল তখন পৌনে চারটে। কোচবিহার শহরের রাস্তায় দুষ্কৃতীরা তাঁকে ঘিরে পরপর দু’টি গুলি চালায়। প্রথমটি না লাগলেও দ্বিতীয় গুলি পেট এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। তার পর থেকে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা মাজিদ আনসারি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বুধবার রাত সওয়া দশটা নাগাদ মারা গেলেন তিনি।

এর আগে মাজিদকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। দু’বার তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার কথাও হয়েছিল। বুধবারই আরও এক বার সেই চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মাজিদের শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, এই ঝুঁকি শেষ অবধি নেওয়া যায়নি।

গত কয়েক দিন থেকেই ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল মাজিদের। এ দিন তাঁর পেটে জমে থাকা জল বের করেছেন ডাক্তাররা। বুধবারও তাঁর পেটের গুলি লাগা অংশ-সহ শরীরের বেশ কিছু জায়গা ফের ফুলে যায়। এ দিনই মাজিদের পরিবার দিল্লির আরও এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বুধবার আবারও শিলিগুড়ির নার্সিংহোমেই অপারেশন করা হয় মাজিদের। বিকেল পাঁচটা থেকে টানা দু’ঘণ্টা অপারেশন চলে। তাতে শরীর থেকে অনেকটা জল বের করে দেন ডাক্তাররা। তাঁর ফুসফুস এবং লিভারের কর্মক্ষমতাও স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলেছে। এ দিন তাঁকে রক্তও দেওয়া হয়। তবে সেই সব চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে দু’সপ্তাহ পেরিয়ে মাজিদ মারা গেলেও অভিযুক্তরা একজনও ধরা পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে লাগাতার আন্দোলনে নামতে চায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি গোষ্ঠী। আগামী ২৭ জুলাই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মিছিলের ডাক দিয়েছে তারা। ওইদিন পুলিশ সুপারের অফিসের সামনেও ধর্নায় বসার কথা তাদের। টিএমসিপি-র কোচবিহার জেলার কার্যকরি সভাপতি সায়নদীপ গোস্বামী বলেন, “পুলিশ সুপারের অফিসে অবস্থানে বসব আমরা। এ বারে টানা আন্দোলন চলবে।”

১৩ জুলাই, শুক্রবার, কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কোচবিহার শহরের স্টেশন মোড়ের কাছে গুলিবিদ্ধ হন মাজিদ। তিনি কোচবিহার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। টিএমসিপির কলেজ ইউনিটের আহ্বায়ক। অভিযুক্তরাও টিএমসিপি কর্মী বলে পরিচিত। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজারই চেষ্টা করছে না। পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। প্রত্যেকে গ্রেফতার হবে।”

শিলিগুড়ি পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে রিকুইজিশন পেলে সকালে একজন পুলিশ আধিকারিক নার্সিংহোমে গিয়ে সুরতহাল করবেন। তারপরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে দেহ ময়নাতদন্ত করে দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার কথা।

ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন দাদা সাদ্দাম। তিনি বলেন, ‘‘ভাই মরে গেল। ও কলেজের জন্য কিনা করেছে। এতদিনেও কাউকে গ্রেফতার করল না পুলিশ। কলেজে তোলাবাজরা ঢুকতে পারে। ছাত্রদের আইকার্ড লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cooch Behar Student Death Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE