সানাউল ইসলাম
কাজ বন্ধ। টাকাও ফুরিয়ে আসছে। তার মধ্যেই শুনলেন, লকডাউনের মেয়াদ আরও দু’সপ্তাহ বেড়েছে। শুধু নিজের চিন্তা নয়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ট্রেন, বাস বন্ধ। তাই ফেরার উপায় নেই। সম্বল বলতে পুরনো একটি সাইকেল। দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার। সাতপাঁচ না ভেবে শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। একটানা ৮৫ ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে কলকাতা থেকে মালদহের চাঁচলের হাজাতপুরের বাড়িতে ফিরলেন নির্মাণশ্রমিক সানাউল ইসলাম। ফিরেই শ্যালক সালাম আলিকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষাও করেন। তাঁদের দু’সপ্তাহ ‘হোম কোয়রান্টিনে’ থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সানাউলের এলাকারই বাসিন্দা চাঁচল-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ওবাইদুল্লা আহমেদ চৌধুরী। সানাউলের প্রতিবেশী চাঁচল বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, আইনজীবী মহম্মদ খাইরুল আনামও। দু’জনেই বলেন, ‘‘করোনার জেরে ভিন্ রাজ্যে বা অন্য জায়গায় আটকে পড়া শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার যে কতটা উদ্বিগ্ন, তা সাইকেলে ৪০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সানাউলের ফেরাতেই স্পষ্ট। পথে বিপদও হতে পারত। কিন্তু ওঁরা যে সুস্থ ভাবে ফিরতে পেরেছেন, এটাই যথেষ্ট।’’
১২ বছর ধরে কলকাতায় নিউটাউন এলাকায় থাকেন সানাউল। ছ’জনের সংসারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে। কম দামে একখানা সাইকেল কিনেছিলেন। সপ্তাহ তিনেক আগেই বাড়ি এসে ফের কলকাতায় ফেরেন। সঙ্গে নেন শ্যালক সালাম আলিকে। বছর আঠারোর সালাম বিহারের বজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা নাগাদ সাইকেলে দু’জনে বেরিয়ে পড়েন। সানাউল জানান, রাস্তায় অনেক বার পুলিশ আটকেছে। কিন্তু সবাইকেই তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন বলে জানানোর পর ছাড়া পান। তিন দিনে তেমন ভাবে খাবারও জোটেনি। রাতেও কোথাও ঘুমোনোর ঝুঁকি নেননি। রবিবার রাত ১১টায় তাঁরা বাড়ি পৌঁছন।
সালাউল এ দিন বলেন, ‘‘হাতে মাত্র এক হাজার টাকা ছিল। বুঝে যাই কলকাতায় থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।’’ সালামের কথায়, ‘‘জামাইবাবুই বেশিরভাগ সময় সাইকেল চালিয়েছে। ঘুমোনোর কথা বললেও রাজি হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy