মাতৃস্নেহ: পরীক্ষাকেন্দ্রে শিশুটির সঙ্গে খুকু। নিজস্ব চিত্র
বছরখানেকের একরত্তি ছেলেকে রেখেই চাকরি করতে বের হতে হয় প্রতিদিন। শনিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগের পরীক্ষার দিন দায়িত্ব সামলাতে পুন্ডিবাড়ি আরজিএল হাইস্কুলে গিয়েছিলেন কোচবিহার সদরের ট্রাফিক পুলিশের মহিলা কনস্টেবল খুকু চট্টোপাধ্যায়। পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টার মাথায় ভিন রাজ্যের প্রবীণার কোলে কাঁদতে থাকা ছোট্ট শিশুটিকে দেখে ছুটে যান তার কাছে। মায়ের মন বুঝে নেয় অন্যের সন্তানের চাহিদা।
ভাঙা হিন্দিতে কোনও রকমে শিশুটিকে স্তন্যদুগ্ধ খাওয়ানোর অনুমতি চান তার ঠাকুমার কাছে। পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্তাদেরও তাঁর ইচ্ছের কথা জানান। আলাদা ঘরের ব্যবস্থা হয়। সেখানেই শিশুটির চাহিদা মেটান। তার আসল মা তখন পরীক্ষা দিতে ব্যস্ত।
বিহারের বাসিন্দা ওই পরীক্ষার্থীর সন্তানকে নিজের সন্তানের মতোই সামলান অনেকক্ষণ। খিদে মেটায় হাসি ফোটে শিশুর মুখে। ঘটনার তিনদিন বাদেও সেই ‘তৃপ্তি’ ভুলতে পারছেন না খুকুদেবী। তিনি বলেন, “আমার ছেলের বয়স এক বছর। ওকে রেখেই কাজে বেরোতে হয়। তাই উদ্বেগ থাকেই। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে শিশুটির কান্না দেখে তাই নিজেকে সামলাতে পারিনি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ‘মানবিকতার’ জন্য কনস্টেবল খুকুদেবীকে পুরস্কৃত করার কথাও ভাবা হচ্ছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “ওই বিষয়ে বিশদে খোঁজখবর নিচ্ছি।”
পুন্ডিবাড়ি আরজিএল স্কুলের প্রধান শিক্ষক অলক ভাট বলেন, “ওই মহিলা কনস্টেবল স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্যের সন্তানের জন্য যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন তা মাতৃত্বের বেনজির দৃষ্টান্ত।” ওই স্কুলের শিক্ষক রাজন দে বলেন, “মা এমনই। অন্যের শিশুর খিদের যন্ত্রণাও যাকে উতলা করে।”
বছর পঁয়ত্রিশের খুকুদেবীর বাবার বাড়ি বাঁকুড়া জেলায়। শ্বশুরবাড়ি দিনহাটায়। দশ বছরের মেয়ে অনুক্ষা, এক বছরের ছেলে আলেখ্যকে বাড়িতে রেখেই চাকরির জন্য তাঁকে বেরোতে হয় প্রতি দিন। যে শিশুর জন্য উতলা হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রশংসার ঝড় বইছে, তার নাম বা শিশুর মায়ের নাম জানাতে পারেননি খুকুদেবী। তিনি বলেন, “এত কিছু ভাবনায় ছিল না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy