উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল কর্মী তুষার বর্মণ খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করল পুলিশ। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শম্ভু রায়কে নিয়ে গিয়ে তপসিখাতার মনিয়ারপুল এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি থেকে বুধবার তিন রাউন্ড গুলি সমেত আগ্নেয়াস্ত্রটি উদ্ধার করে পুলিশ৷ এরপর জয়বাংলা হাটে শম্ভুকে নিয়ে গিয়ে সেদিনের খুনের ঘটনার পুনর্নিমাণও করা হয়৷
গত ২২ জানুয়ারি খুন হন তপসিখাতার তৃণমূল কর্মী তুষার বর্মণ৷ অভিযোগ ওঠে, স্থানীয় পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান শম্ভু রায় ও তার দলবল জয় বাংলা হটে ডেকে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তুষারকে বেধড়ক মারধর করে৷ তারপর শম্ভু কোমর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে তুষারকে লক্ষ করে গুলি চালিয়ে দেয় বলে অভিযোগ৷ ঘটনার পরই এক অভিযুক্ত, পরোরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সোনা রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পরবর্তীতে মালদহ থেকে ধরা পড়ে আরেক অভিযুক্ত অরবিন্দ বর্মণ৷ গত সপ্তাহে ফালাকাটা থেকে মূল অভিযুক্ত শম্ভু ও তার সঙ্গী বিদ্যুৎ রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ৷
গ্রেফতারের পর ধৃতদের টানা জেরা করে গত সোমবার তপসিখাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পাশে অরবিন্দর দেখানো জায়গায় মাটির নীচ থেকে একটি ওয়ান শটার ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছিল পুলিশ৷ কিন্তু পুলিশ জানিয়েছিল, জেরায় অরবিন্দ দাবি করেছে, সেটা তার নিজস্ব আগ্নেয়াস্ত্র৷ তুষারকে সেই অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়নি৷ এরপর শম্ভুকে টানা জেরা করে পুলিশ জানিতে পারে মনিয়ারপুল এলাকায় নিজের শ্বশুরবাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্রটি লুকিয়ে রেখেছে সে৷ দক্ষিণ পাকুড়িতলায় শম্ভুর বাড়ি যে বাড়ির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার৷ পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ শম্ভুকে নিয়ে মনিয়ারপুল এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে যায় পুলিশ৷ তখন বাড়িতে এক বৃদ্ধা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না৷ সেখানে পৌঁছতেই শম্ভু পুলিশকে পরিত্যক্ত একটি ঠাকুরঘর দেখিয়ে দেয়৷ ঘরের এক কোণে গামছা পেঁচানো নাইন এমএম পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ৷
শম্ভুকে নিয়ে পুলিশ তপসিখাতায় যেতেই তার শ্বশুরবাড়ির সামনে প্রচুর মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন৷ তবে শম্ভু অবশ্য প্রায় সারাক্ষণই মাথা নীচু করে ছিল সেখানে৷ অস্ত্রটি উদ্ধার করেই দ্রুত শ্বশুরবাড়ি থেকে শম্ভুকে নিয়ে ঘটনাস্থল জয় বাংলা হাটে চলে যায় পুলিশ৷ সেখানে শম্ভুকে দিয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণ করানো হয়৷ সেই সময় সেখানেও প্রচুর মানুষ ভিড় করেন৷ খানিকটা উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়ে সেখানে৷ অনেকেই শম্ভুকে দেখে চিৎকার করে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেন৷ পুনর্নিমাণ শেষ হতেই সেখান থেকে শম্ভুকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায় পুলিশ৷
জেলা পুলিশ সুপার সুনীল যাদব জানিয়েছেন, “শম্ভুর দেখানো জায়গা মতো তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তিন রাউন্ডগুলি-সহ একটি পিস্তল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে৷” পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় শম্ভু জেরায় স্বীকার করেছে এ দিন উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি দিয়েই তুষারকে খুন করেছে সে৷ শম্ভুর স্বীকারোক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পিস্তলটি ফরেন্সিক ল্যাবরেটারিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তুষার খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হওয়ায় খুশি তপসিখাতার বাসিন্দারা৷ তবে এ দিনও তাঁরা ধৃতদের কড়া শাস্তির দাবি তোলেন। এই ঘটনায় আরেক ধৃত অরবিন্দকে এ দিন ফের আদালতে তোলা হয়৷ পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার তার থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র মিলেছিল৷ সেজন্য তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও মামলা রুজু হয়েছে৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy