Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চিলের হামলা ঠেকাতে স্কুলে প্রহরী বনকর্মী

কিন্তু কেন এমন ব্যবস্থা? বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার শহরের জেনকিন্স স্কুল চত্বরের একটি গাছের ওপর বাসা বেঁধেছে চিলেরা। চিল-যুগল ছানাদের নিয়ে বেশ সুখের সংসার পেতেছে সেখানে। ছানাদের নিরাপত্তায় পালা করে স্কুলেরই একটি নারকেল গাছের ওপর পালা করে পাহারা দিচ্ছে দুটি চিল।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৭
Share: Save:

চিতাবাঘ, হাতি, গন্ডার, বাইসন বা অন্য বন্যপ্রাণী নয়, কোচবিহারে বনকর্মীদের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক চিল-যুগল। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়েছে যে, চিল দু’টির ‘আক্রমণ’ ঠেকাতে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে টানা নজরদারি চালাতে হচ্ছে। এমনকি এ জন্য একজন বনকর্মীকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যিনি রোজ নির্দিষ্ট সময়ে চিলের ডেরা চত্বরে গিয়ে হাজির হচ্ছেন। দিনভর থাকছেন। বনকর্মীদের একাংশই জানাচ্ছেন, চিলের জন্য এমন কড়া নজরদারি নজিরবিহীন। রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, “সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেই নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

কিন্তু কেন এমন ব্যবস্থা? বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, কোচবিহার শহরের জেনকিন্স স্কুল চত্বরের একটি গাছের ওপর বাসা বেঁধেছে চিলেরা। চিল-যুগল ছানাদের নিয়ে বেশ সুখের সংসার পেতেছে সেখানে। ছানাদের নিরাপত্তায় পালা করে স্কুলেরই একটি নারকেল গাছের ওপর পালা করে পাহারা দিচ্ছে দুটি চিল। ওই গাছ লাগোয়া চত্বরে ছাত্র, শিক্ষক বা অন্য কোনও মানুষের আনাগোনা দেখলেই একাধিকবার পালা করে তেড়ে এসেছে চিল-যুগল। জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে স্কুলের দু’জন শিক্ষকের ওপর হামলাও চালিয়েছে তারা। তারপর থেকেই স্কুলের আবেদন শুনে ওই নজরদারি চালানো হচ্ছে। স্কুলের দিনগুলিতে একজন কর্মী প্রায় ১০টা-৫টা ‘ডিউটি’ করছেন। এক বনকর্তার দাবি, জানুয়ারির ১২ তারিখ থেকে নজরদারি হচ্ছে। তারপর মাঝেমধ্যে চোখের পলকে নীচে নেমে আসার চেষ্টা করলেও কারও ওপর হামলা হয়নি। তাছাড়া ওই গাছ লাগোয়া রাস্তা পুরো ‘সিল’ করে পড়ুয়া, শিক্ষকদের যাতায়াতও বন্ধ রাখতে হয়েছে। চিলের নিরাপত্তার সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য ওই ব্যবস্থা করা হয়।

বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, পাশের জেলা আলিপুরদুয়ারে যখন ‘মানুষখেকো’ চিতাবাঘ নিয়ে ঘুম ছুটেছে,জলপাইগুড়ির চা বাগান এলাকার স্কুলে চিতাবাঘ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে শিবির করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়া অন্য বন্যপ্রাণীদের ফেরাতে হিমসিম খেতে হয়। তখন চিল যুগলকে ‘বাগে’ আনার সহজ উপায় মিলছে না। এক বনকর্মীর কথায়, ‘‘ঘুমপাড়ানি গুলি, খাঁচার দাওয়াই এ ক্ষেত্রে খাটছেনা। একমাত্র উপায় চিলের ছানাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ যাতে না বাড়ে সেটা দেখা। ঝুঁকি নিচ্ছি না। তবে ছানা দুটি উড়তে শিখলে ওই চিল পরিবার ডেরা বদলাতে পারে।’’ পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “চিল সাধারণত লোকালয়ে ডেরা করে না। কোনও কারণে এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। সন্তানেরা উড়তে শিখলে সবার অন্যত্র যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।” বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার সুরঞ্জন সরকারও বলছেন, “আমাদেরও কিন্তু তেমনই ধারণা।”

জেনকিন্স স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রিয়তোষ সরকার বলেন, “বনকর্মীরা রোজই আসছেন, দেখা যাক শেষপর্যন্ত কী দাঁড়ায়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Guard Forest Department Hawk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE