Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালে আগুন, মৃত্যু ১ জনের

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরে হঠাৎই সিসিইউ-র ঘরটি ধোঁয়ায় ভরে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে জানা গিয়েছে, সিসিইউ-র ৩ নম্বর শয্যায় থাকার রোগীর ভেন্টিলেটরে আগুন লাগে।

মেডিক্যালে এখানেই লাগে আগুন। নিজস্ব চিত্র

মেডিক্যালে এখানেই লাগে আগুন। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

ভোর তখন সাড়ে পাঁচটা। আচমকা আগুন লেগে যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউ-এর একটি ভেন্টিলেটরে। সেখান থেকে দ্রুত রোগীদের সরানোর ব্যবস্থা হয়। ভেন্টিলেশন খুলে অন্যত্র সরানোর সময়ে সবেরা খাতুন (৫০) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পরিবারের লোকেরা অভিযোগ করেছে, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকাতেই এই অঘটন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সব ব্যবস্থাই ছিল। তাঁরা জানান, রোগীর শারীরিক অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। সিসিইউ-তে থাকা বাকি রোগীদের নিকটবর্তী একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে, জানিয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব।

পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে রোগিনী মারা গিয়েছে তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দেওয়ার ব্যাপার নেই। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। তাই মারা গিয়েছেন। আগুন লাগার সঙ্গে তা যুক্ত নয়। তবে কেন এ ভাবে আগুন লাগল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ মেডিক্যালের সিসিইউ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সিসিইউ-র ১০টি শয্যায় সব কটিতেই এ দিন রোগী ছিল। ইসলামপুরের রুইয়ার বাসিন্দা সবেরা খাতুন দশ দিন ধরে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোরে হঠাৎই সিসিইউ-র ঘরটি ধোঁয়ায় ভরে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পরে জানা গিয়েছে, সিসিইউ-র ৩ নম্বর শয্যায় থাকার রোগীর ভেন্টিলেটরে আগুন লাগে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। ঘরে কর্তব্যরত দুই নার্স ভয়ে বাইরে ছুটে যান। নীচ থেকে ছুটে আসেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। ওয়ার্ড মাস্টারে অফিসে যাঁরা তখন বসেছিলেন, তাঁরাও চলে আসেন। টেকনিশিয়ানরা ভেন্টিলেটর খুলে দিলে তাঁরাই রোগীদের উদ্ধার করে লাগোয়া শল্য বিভাগে এবং ফিভার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। নীচ থেকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ততক্ষণে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক, হাসপাতালের কর্মীদের কয়েক জন আগুন নেভাতে চলে এসেছেন। খবর পেয়ে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন পৌঁছয়। আগুন ততক্ষণে নিভে গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, পৌনে ছ’টা নাগাদ মেডিক্যাল কলেজ লাগোয়া একটি নার্সিংহোমে সিসিইউ-র ৯ রোগীকে স্থানান্তর করা হয়। তাঁরা অনেকেই ‘প্যানিক অ্যাটাক’-এ আক্রান্ত। রোগীদের নার্সিংহোমে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। ৫ জন ভেন্টিলেশনে রয়েছেন।

বুধবার রাতে তুফানগঞ্জ মহকুমা হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার শব্দ করে খুলে গেলে আগুন লাগার আতঙ্ক ছড়ায়। হুড়োহুড়ির সময় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এ বার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ঘটনায় সিসিইউ-তে কর্তব্যরত নার্স, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার সময় চিকিৎসক-সহ যাঁদের থাকার কথা, তাঁরা সকলে ছিলেন কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। হাসপাতাল সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, ‘‘রোগী মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যের। তবে তিনি সেপ্টিসিমিয়া, ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, রেনাল ফেলিওর-এর রোগী। তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে।’’

মৃতের স্বামী পেশায় কৃষক মহম্মদ নুরুল বলেন, ‘‘আগুন লাগলে ভেন্টিলেটর থেকে স্ত্রীকে বার করে আনা হয়। কিন্তু বাইরে এনে অক্সিজেন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বারবার বলা হলেও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না।’’ সে কথা অস্বীকার করে হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘আমরা সব কিছুর উপরেই নজর রেখেছিলাম। রোগীর অবস্থাও খুবই খারাপ ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Fire in Hospital Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE