অবাধে: হোটেলের টেবিলেই বসে আসর। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
রাত ১১টা পেরিয়েছে। ধূপগুড়ি চৌপথীর সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ি। সেই গাড়িতে বসেই মোবাইলে কাকে যেন ফোন করে আরোহী বললেন, ‘‘একটা ঠান্ডা লাগবে।’’ ঠিক মিনিট দশ পরে জ্বলে উঠল হেডলাইটের আলো। শাড়ির আঁচলে লুকোনো একটি ছোট্ট বোতলের হাতবদল করেই রাস্তার উল্টো দিকের হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ালেন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এক মহিলা। ‘‘দেখে তো মনে হল পুলিশ! মদ বিক্রি করতে ভয় করে না?’’ প্রশ্ন শুনে একগাল হেসে মহিলার জবাব, ‘‘পুলিশও তো আমাদের খদ্দের। ভয় পাব কেন?’’ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি অবশ্য বলেন, ‘‘বেআইনি মদ ব্যবসাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। ধূপগুড়ি-ফালাকাটার মতো শহরে পুলিশ রোজই বেআইনি মদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।’’
এই ‘সাহসে’ ভর করেই ধূপগুড়িতে বেআইনি মদের ব্যবসা বাড়ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধূপগুড়িতে বেআইনি মদের দোকানগুলিতে সাধারণ খদ্দেরদের সঙ্গে আনাগোনা রয়েছে অনেক পুলিশকর্মীরও। চৌপথীর পাশেই একাধিক হোটেল। সেখানেই খেতে আসেন অনেক পুলিশকর্মী। তাঁদের কেউ কেউ চাইলেই টেবিলে মদের বোতল চলে আসে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।
অভিযোগ, বড় রাস্তার পাশে গাড়ি দাঁড়ালেই সেখানে ছুটে যান হোটেলের কর্মীরা। ইশারা মিলতেই পরক্ষণেই মদের সঙ্গে জলের বোতল, ছোলা, বাদাম, চানাচুর-সহ বিভিন্ন ‘চাট’ নিয়ে গাড়ির সামনে হোটেলকর্মীরা হাজির হয়ে যান বলে দাবি বাসিন্দাদের।
এক হোটেল মালিকের কথায়, ‘‘সরকার নির্ধারিত মদের দোকান খোলা থাকে রাত দশটা অবধি। তারপর রাত-বিরেতে মদ লাগলে তো ভরসা আমরাই!’’ তবে মদ ‘ডেলিভারি’র পাশাপাশি বেআইনি মদের দোকান বা হোটেলগুলি থেকে থানার লকআপে থাকা বন্দিদের জন্য খাবারও পাঠানো হয় বলে দাবি মদ বিক্রেতাদের। এক বেআইনি মদ বিক্রেতার দাবি, পুলিশের সঙ্গে যথেষ্ট ‘সুসম্পর্ক’ রেখেই ব্যবসা চালান তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেআইনি মদের দোকানগুলি থেকে পুলিশ নিয়মিত মাসোহারা পায় বলেই সব জেনেও তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না।
যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। তাদের দাবি, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। পুলিশের বক্তব্য, কে কোথায় বেআইনি মদ বিক্রি করছে তা দেখা পুলিশের কাজ নয়। এর জন্য আবগারি দফতর রয়েছে। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারও জানিয়েছেন, বেআইনি মদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে পুলিশ। ধূপগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রাজেশকুমার সিংহ বলেন, ‘‘বেআইনি মদ ঠেকাতে আবগারি দফতর ও পুলিশকে ভূমিকা নিতে হবে। কারণ বেআইনি মদের দোকানে জাল মদ বিক্রির সম্ভাবনা ও তাতে মৃত্যুর আশঙ্কাও রয়েছে।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy