জাগো: আঁকা হচ্ছে বড়দেবীর চোখ। মহালয়ার সকালে, কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
পুজো মানে যেন ‘ফ্রি’র বাজার! কোথাও একটি জামার সঙ্গে আরেকটি। কোথাও আবার নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিল বুঝে সাবান, সার্ফ, জলের বোতল, সুগন্ধী বা কাপ-প্লেটের সেট। বড় অঙ্কের কেনাকাটায় প্রেসার কুকার থেকে মোবাইল সেটও বাদ যাচ্ছে না। এ বার ‘ফ্রি’-এর বাজার মৃৎশিল্পী মহল্লাতেও। অনেক কারখানায় দেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ‘অসুর’! হ্যাঁ ঠিকই, অসুর। প্রতিমা কিনলে ছাড় বলতে দুর্গা মায়ের পায়ের কাছে একের বদলে দুই অসুর। আর বাজেট বেশি থাকলে তো কথাই নেই, মিলতে পারে তিন-চারটিও।
কয়েক বছর আগেও পুজোর মরসুম তো বটেই, অন্য সময়েও কোচবিহারে কেনাকাটায় ‘ফ্রি’-এর রেওয়াজ সে ভাবে ছিল না।
একমাত্র চৈত্রে দামে ছাড় দেওয়াটাই ছিল দস্তুর। কিন্তু সময়ের প্রবাহে পরিস্থিতি বদলেছে। জেলা জুড়ে রমরমা এখন শপিং মলের। সেখানে কেনাকাটায় লটারির কুপন থেকে বিলের অঙ্কের ভিত্তিতে পরের কেনাকাটায় ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও নানা উপহার জেতার হাতছানি থাকছে। ক্রেতা টানতে তাই জামাকাপড় থেকে প্রসাধনী, এমনকি, জুতো বিক্রেতারাও নানা রকম ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন। আর তাতে খুশি ক্রেতারাও।
কিন্তু তা বলে অসুরও ফ্রি! মৃৎশিল্পীদের অনেকেই জানালেন, কেনাকাটা আর সঙ্গে বাড়তি কিছু পাওয়ার রেওয়াজে জমে উঠেছে দোকান-বাজার। আর তারই প্রভাব যেন পড়েছে মৃৎশিল্পী মহল্লায়। প্রতিমার বায়না দেওয়া থেকে শুরু করে কেনার জন্য অগ্রিম দিতে এসে অনেক খদ্দেরই ‘ফ্রি’-এর বায়না জুড়ছেন। আপত্তি করলে দাম কমাতে প্রস্তাব দিচ্ছেন। বাধ্য হয়েই তাই একাধিক অসুর করার কথা বলে সমঝোতা করতে হচ্ছে।
মৃৎশিল্পী সুজিত পাল বললেন, ‘‘পুরনো ক্রেতারা অনেকেই
বাজারের উদাহরণ টেনে ফ্রি চাইছেন। তাই নিখরচায় অতিরিক্ত অসুর তৈরি করে সমঝোতা করতে হচ্ছে।’’ আর এক মৃৎশিল্পী অজয় পাল বলেন,‘‘আমিও চারটি প্রতিমায় দু’টি করে অসুর করেছি।’’
পুজো মণ্ডপে ‘অসুরের’ আকর্ষণের কথা মানছেন উদ্যোক্তারা অনেকেই। কোচবিহার কল্যাণ সঙ্ঘের পুজো কমিটির কর্তা পরিতোষ কর বলেন, ‘‘একাধিক অসুর থাকলে প্রতিমা বেশ ভরাট লাগে। ছোটদের আকর্ষণ বাড়ে। তাই দাঁড়িয়ে যুদ্ধরত অসুরের সঙ্গে দেবীর পায়ের তলাতেও আরেকটি অসুর রাখছি। শিল্পীদের অনুরোধ করে ওই একটা বাড়তি অসুর একই খরচে পাচ্ছি।’’
শিল্পীরা অবশ্য জানালেন, শুধু দু’টি নয়, একাধিক প্রতিমায় তিনটি করেও অসুর থাকছে। কোনওটিতে বা তারও বেশি। তবে তা নির্ভর করছে পুজোর বাজেটের উপরে। বড় বাজেটের পুজোগুলিতে কখনও এ রকম একাধিক অসুর দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে, জানালেন শিল্পীরাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy