আজ ভোট জলপাইগুড়িতে। পতাকায় ছয়লাপ শহর। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
শতাধিক বছরের পুরনো জলপাইগুড়ি পুরসভায় আগামী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা দখলে আজ লড়াইয়ে নামছেন ১০৬ জন প্রার্থী। আজ, শনিবার তাঁদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন শহরের ৮৩ হাজার ১২৩ জন ভোটার।
ইতিমধ্যে ভোটযুদ্ধে বেশির ভাগ আসনে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা প্রকট হওয়ায় আশাবাদী হয়েছে বামফ্রন্ট। যদিও আশঙ্কা রয়েছে, ত্রিশঙ্কু বোর্ডের। কংগ্রেস নেতৃত্ব আবার মনে করছেন, ভোটে ‘ঘর ভাঙা খেলার’ মোক্ষম জবাব মিলবে। তৃণমূলকে বসতে হবে বিরোধী আসনে। তৃণমূল শিবিরের পাল্টা দাবি, বিরোধীরা এখানে কতটা অপ্রাসঙ্গিক হয়েছে সেটা এ বার স্পষ্ট হবে।
পুরসভার ২৫টি আসনের মধ্যে ২৪টি করে প্রার্থী রয়েছে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের। প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে তৃণমূল এবং বিজেপি। নির্দল প্রার্থী রয়েছেন ৮টি আসনে। তাঁদের মধ্যে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল আছেন দু’জন। বাকি ছ’জন নির্দলের মধ্যে পাঁচ জন তৃণমূলের গোঁজ প্রার্থী বলে খবর। স্থানীয় সূত্রের দাবি, ১ ও ১৯ নম্বর আসনের নির্দল প্রার্থী শাসকদলের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার দলের তরফে ওই দুই জায়গায় নির্দল সমর্থকদের বিরুদ্ধে নির্বাচন আধিকারিকদের কাছে সন্ত্রাসের অভিযোগ জানানো হয়। নির্দলদের তরফেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
শুধু নির্দল নয়। এদিন তৃণমূলের তরফে নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে ২, ৯, ১০, ১৬, ২০ নম্বর আসনে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে এবং ১১, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫ নম্বর আসনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে হুমকি, পোস্টার-পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করা হয়। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে ২, ৩, ১১ নম্বর এবং কংগ্রেসের তরফে ১, ৩, ২২, ২৩, ২৪, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে হুমকি, বুথ অফিসের কাপড়, পোস্টার, পতাকা ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ জানানো হয়। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেতৃত্ব কী ইঙ্গিত দিলেন?
যে সমস্ত আসনে দল ‘কঠিন’ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সেখানে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তৃণমূল কি জমি পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা করছে? দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী দাবি করেন, “আমরা ক্ষমতায় ফিরছি। বিরোধীরা পরাজয় নিশ্চিত টের পেয়ে যা খুশি তাই করেছে। সেটা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি বলেই অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’ তাঁর আরও দাবি, নির্দল প্রার্থীরা ভোটে কোন ভূমিকা নিতে পারবেন না। বামফ্রন্টের পক্ষে সিপিএমের প্রমোদ মণ্ডলের যদিও বক্তব্য, “ওই দু’টি আসনে নির্দলেরা তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে ধস নামিয়েছে। ওঁদের ভোট কাটাকুটি বিরোধী কোন দলকে সুবিধা করে দেয় সেটাই এখন দেখার।” তাঁর দাবি, করলা নদীর ওপারে ১, ২ এবং ৩ নম্বর আসন এবং নদীর এই পারে ১৯ নম্বর থেকে ২৫ নম্বর আসনে তৃণমূলের বিরোধীদের প্রাধান্য থাকবে। একমত পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস নেতা পিনাকী সেনগুপ্তও।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, অন্তত ১৪টি আসনে এ বার শাসকদলকে কড়া লড়াইয়ের মুখে দাঁড়াতে হবে। কংগ্রেস ছেড়ে আসা বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসুর রাজনৈতিক কৌশল কতটা কার্যকর হবে, তার পরীক্ষা হবে আসনগুলির ফলাফলে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ১৪টি আসনের মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে অন্তত ১১টিতে।
যদিও ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা উড়িয়ে প্রদেশ তৃণমূল সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী দাবি করেন, ‘‘২০১০ সালে পুরভোটে কংগ্রেস একক ভাবে ১৬টি আসন দখল করলেও লোকসভা ভোটে সংগঠনে ধস নামে। অন্য দিকে তৃণমূল ভোট বাড়িয়েছে। পুরভোটে সেটার প্রভাব কিছুটা হলেও তো পড়বে।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের এই দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, “পুরভোট স্থানীয় ভোট। লোকসভার কোনও প্রভাব পড়বে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy