ফাইল চিত্র।
২০১৭-এর শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন কাওয়াখালির অনিচ্ছুক মালিকদের অধিগৃহীত জমি ফেরত দেবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে বছর ঘুরতে চলল, এখনও জমি ফেরত পাননি অনিচ্ছুক মালিকরা। প্রশাসনিক জটিলতার কারণেই সেই প্রক্রিয়া মাঝপথে আটকে আছে বলে প্রশাসনের দাবি। অন্য দিকে, জমি মালিকদের বক্তব্য, সকলকে একসঙ্গে জমি ফেরত দেওয়া না হলে তাঁরা জমি দখল করে নিজেরাই ভাগ করে নেবেন।
সরকারি সূত্রের খবর, অনিচ্ছুক ৫২ জন মালিকের মধ্যে এর মধ্যেই ১৫ জনের নামে জমি ফেরতের কাগজপত্র তৈরি করে ফেলেছে এসজেডিএ। বাকিদের মধ্যে ৩০ জনের জমি নিয়ে ছোট-বড় কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু মূল জটিলতা সাতটি জমিতে। ওই জমিগুলির ক্ষেত্রে একাধিক মালিকের হদিস মিলেছে। যদিও আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রশাসনের গাফিলতির জন্যই ওই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাঁরা ঘোষণা করেছেন, যত দিন না সবাইকে একসঙ্গে জমি ফেরত দেওয়া হচ্ছে, তত দিন তাঁরা কেউ জমি নেবেন না।
ঠিকনিকাটা-কাওয়াকালি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মণিমোহন বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রশাসনের গাফিলতির ফল ভুগছি আমরা। সবাইকে একসঙ্গে জমি ফেরত না দেওয়া হলে এ বার আমরা জমি দখল করে নিজেরাই ভাগ করে নেব।’’
২০০৪ সালে দার্জিলিং জেলার ঠিকনিকাটা ও কাওয়াখালি এবং জলপাইগুড়ি জেলার পোড়াঝাড় এলাকায় প্রায় ৩০২ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল তৎকালীন রাজ্য সরকার। সেই জমির দ্বায়িত্ব যায় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)-এর হাতে। অধিগৃহীত জমির ৮৯ একর জমি কাওয়াখালি ও ঠিকনিকাটা এলাকার। বাকি ২১৩ একর জমি পোড়াঝাড় এলাকার। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হলেও এখনও অধিগৃহীত ২০০ একরেরও বেশি জমি এখনও ফাঁকা পড়ে আছে। অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে সেই সময় বাম সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছিলেন স্থানীয় জমি মালিকরা।
পরবর্তী সময়ে সরকারি চাপ-সহ নানা কারণে বেশির ভাগ মালিক আন্দোলন থেকে সরে এলেও ৫২ জন অনিচ্ছুক মালিক আন্দোলন চালিয়ে যায়। জমি মামলা পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সেই সময় আন্দোলনকারীদের পাশে দাড়িয়েছিল তৃণমূল। বর্তমান রাজ্য সরকারের অনেক নেতা-মন্ত্রী তখন কাওয়াখালির অনিচ্ছুক জমি মালিকদের প্রতিবাদ মঞ্চে হাজির হন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর কাওয়াখালির জমি ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি মেনে সুপ্রিম কোর্টের মামলা প্রত্যাহার করে অনিচ্ছুকরা।
এর পরেও দীর্ঘ টানাপড়েনে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। অনিচ্ছুক জমি মালিক কানাই অধিকারী বলেন,‘‘প্রশাসন, নেতা-মন্ত্রীদের দরজায় ঘুরে ঘুরে হাল খারাপ। যদি জমি ফেরত দেওয়ার হয় তো দিক, আর না দিতে পারলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া বন্ধ হোক।’’ এসজেডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক এস পুন্নমবলম বলেন, ‘‘জমি ফেরতের প্রক্রিয়া চলছে। কিছু কাগজপত্র তৈরি হয়ে গিয়েছে। সাত জনের জমি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। সেই জমি আদৌ তাঁদের কিনা, সেটা যাচাই করার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy