Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চার মাসের ‘শয়ানে’ গেলেন ‘ছোটবাবা’

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, বৈরাগী দিঘির পাড়ের মন্দিরে মদনমোহন দেবের দু’টি বিগ্রহ রয়েছে। তার মধ্যে মদনমোহনের বড় বিগ্রহটি ‘বড়বাবা’ নামে পরিচিত।

সজ্জা: এখানেই শোয়ানো হবে ‘ছোটবাবা’কে। —নিজস্ব চিত্র।

সজ্জা: এখানেই শোয়ানো হবে ‘ছোটবাবা’কে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৭ ১৩:৪৯
Share: Save:

টানা চার মাসেরও বেশি দিনের জন্য ঘুমোতে গেলেন ‘ছোটবাবা’। তাও আবার বেগুন, পটল, পুঁইয়ের পাতা দিয়ে তৈরি বিছানার গদিতে।

তবে তোষক, বিছানার চাদর, পাশ বালিশ থেকে মাথায় দেওয়ার বালিশ সবই নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। তোষকের নীচে রাখা হয় ওই শাক পাতা। সেগুন কাঠের খাটও ঝাঁ চকচকে করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় বৈরাগী দিঘি পাড়ে কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে বিশেষ পুজো, যজ্ঞানুষ্ঠানের পর ওই বিছানাতেই লম্বা ‘শয়ানে’ ঘুমোতে যান মন্দিরের ছোটবাবা।

দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রেই জানা গিয়েছে, বৈরাগী দিঘির পাড়ের মন্দিরে মদনমোহন দেবের দু’টি বিগ্রহ রয়েছে। তার মধ্যে মদনমোহনের বড় বিগ্রহটি ‘বড়বাবা’ নামে পরিচিত। ছোট বিগ্রহটিকে ভক্তদের কাছে ‘ছোটবাবা’ নামে পরিচিত। ফি বছর টানা চার মাসের বেশি সময় ওই বিগ্রহ ‘শয়ানে’ রাখা হয়। উল্টোরথের পরে দ্বাদশী তিথিতে ওই শয়নযাত্রা হয়। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ওই বিগ্রহকে ফের জাগিয়ে তোলা হয় রাস পূর্ণিমার তিন দিন আগে। এ বার নভেম্বর মাসের ৮ তারিখে ওই রীতি মেনেই ‘উত্থান যাত্রা’য় ঘুম ভাঙানো হবে ছোটবাবার। দুই উৎসবের সঙ্গেই কোচবিহারের বাসিন্দাদের বাড়তি আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। ওই ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “রীতি মেনে সমস্ত আয়োজন হয়েছে।”

ট্রাস্ট সূত্রেই জানা গিয়েছে, তিন বাই দুই ফুটের ওই খাটে ‘ঘুমন্ত’ অবস্থায় থাকা ছোটবাবার পার্শ্ব পরিবর্তন যাত্রা হবে আগামী এক মাসের মাথায়। সে দিন বিগ্রহকে অন্য দিকে কাত করে শুইয়ে দেওয়া হয়। ছোটবাবার শয়নযাত্রা চলাকালীন মন্দিরে বড়বাবার ভোগের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ মানা হয়।

ওই মন্দিরের পুরোহিত হীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই সময়টা ভোগে পটল, বেগুনের মতো আনাজ, পুঁই ও কলমির মতো শাক দেওয়া হয় না।” দেবোত্তর ট্রাস্টের এক কর্মী জয়ন্ত চক্রবর্তী জানান, রথ থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত এক সপ্তাহ ছোটবাবার বিগ্রহ মূল সিংহাসনে রাখা হয়।

ইতিহাস গবেষকরা জানান, ১৮৯০ সালে ওই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন থেকেই দু’টি বিগ্রহ সেখানে রয়েছে। নব্বইয়ের দশকে পুরোনো বিগ্রহ চুরির পর এখনকার নতুন বিগ্রহগুলি বেনারস থেকে তৈরি করে আনা হয়।

গবেষক নৃপেন পাল বলেন, “মহারাজা নরনারায়ণের আমলে শঙ্কর দেবের অনুপ্রেরণায় ছোটবাবার বিগ্রহ তৈরি হয়। সেটা পঞ্চদশ শতকের কথা। রাজবাড়িতেও পুজো হত ওই বিগ্রহের। মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণের আমলে অষ্টাদশ শতকে বড়বাবার বিগ্রহ বেনারস থেকে এনে ওই মন্দিরে পুজো শুরু হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lord Krishna Rituals Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE