পরিদর্শকের অভাবে গত প্রায় দেড় বছর ধরে উত্তর দিনাজপুরে শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রম দফতরের আধিকারিকদের ক্ষোভ, গত বছরের অগস্ট থেকে রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর মহকুমা শ্রম দফতরের তরফে লিখিতভাবে সমস্যার কথা জানানো হলেও শূন্যপদে পরিদর্শক নিয়োগ করা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে জেলার ন’টি ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান বন্ধ। যার সুযোগে বিভিন্ন ইটভাটা, হোটেল, রেঁস্তোরা, মিষ্টির দোকান-সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। একই দাবি করেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও।
রায়গঞ্জ মহকুমা শ্রম আধিকারিক আলি আহমেদ আলমগীর বলেন, “পরিদর্শকের অভাবে গত প্রায় দেড় বছর ধরে আমরা জেলা জুড়ে শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। গত ছ’মাস ধরে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার চিঠি দিয়ে সমস্যার কথা জানানো হলেও শূন্যপদে পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়নি।” তাঁর দাবি, পর্যাপ্ত পরিদর্শক থাকাকালীন প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন করে জেলাজুড়ে শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান চালানো হত। কোনও ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি বেআইনিভাবে শিশুশ্রমিক নিয়োগ করেছেন বলে প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দফতরের তরফে মামলা দায়ের করে শিশুশ্রমিকদের উদ্ধার করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হত।
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মত্স্য বিষয়ক পরিষদীয় সচিব অমল আচার্যের দাবি, “কয়েকমাস আগে রাজ্যের সমস্ত জেলার শ্রম আধিকারিকদের কাছে দফতরের শূন্যপদের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে সেই প্রক্রিয়া চালু থাকায় শূন্যপদে পরিদর্শক নিয়োগ হতে সাময়িক দেরি হচ্ছে। আশা করছি, আগামী দু’একমাসের মধ্যে সরকারি উদ্যোগে শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে।”
নেই নজরদারি
• রায়গঞ্জ মহকুমার রায়গঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহার ব্লকে নেই পরিদর্শক।
• ইসলামপুর মহকুমার করণদিঘি, গোয়ালপোখর ২, চোপড়া ও ইসলামপুর ব্লকে নেই পরিদর্শক।
• ইটভাটা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকানে শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ।
• পরিদর্শকের অভাবে প্রায় দেড় বছর জেলায় শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান বন্ধ রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির দাবি, জেলার ন’টি ব্লকের বিভিন্ন এলাকার ইটভাটা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, মিষ্টির দোকান-সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ১৮ বছরের কম পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশুশ্রমিক কাজে নিযুক্ত রয়েছে। শিশুশ্রমিকদের পুনর্বাসন ও শিক্ষার জন্য কয়েকবছর আগে সরকারি উদ্যোগে ইসলামপুরে একটি আবাসিক স্কুলও তৈরি হয়েছে। শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ন’টি ব্লক, চারটি পুরসভা ও দু’টি আঞ্চলিক দফতর মিলিয়ে ১৫টি পরিদর্শকের পদ থাকলেও গত দেড় বছর সাতটি পদ ফাঁকা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
দফতর সূত্রে খবর, রায়গঞ্জ মহকুমার রায়গঞ্জ পুরসভা, রায়গঞ্জ আঞ্চলিক দফতর, কালিয়াগঞ্জ ব্লক ও কালিয়াগঞ্জ পুরসভায় পরিদর্শক থাকলেও রায়গঞ্জ, ইটাহার ও হেমতাবাদ ব্লকে পরিদর্শক নেই বলে জানা গিয়েছে। কিছুদিন আগে কালিয়াগঞ্জ ব্লক ও কালিয়াগঞ্জ পুরসভায় নিযুক্ত দু’জন পরিদর্শক উন্নত সরকারি প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ছুটিতে গিয়েছেন বলে খবর। অন্যদিকে, ইসলামপুর মহকুমার গোয়ালপোখর-১ ব্লক, ডালখোলা পুরসভা, ইসলামপুর আঞ্চলিক দফতর ও ইসলামপুর পুরসভায় পরিদর্শক থাকলেও করণদিঘি, গোয়ালপোখর-২, চোপড়া ও ইসলামপুর ব্লকে পরিদর্শক নেই।
আর এ কারণেই বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার বেড়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। তবে রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী ও পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত সোমের দাবি, “শিশুশ্রমিক না নিয়োগ করতে সংগঠনের তরফে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy