Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খোলা গেল না ব্যানার

নিহতদের পরিবারেরা লোকেরা বলেন, এটা রাজনৈতিক নয়, স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল। তাঁরা পড়ুয়াদের জানান, ছাত্রছাত্রীরা চাইলে ব্যানার থাকবে। 

মিছিল: শনিবার স্কুলের ক্যাম্পাসেই মিছিল পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

মিছিল: শনিবার স্কুলের ক্যাম্পাসেই মিছিল পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৯
Share: Save:

হাইকোর্টের নির্দেশ দিয়েছে, স্কুল চত্বর থেকে ব্যানার-পোস্টার সরাতে হবে। অথচ সে সব খোলাতে এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ প্রশাসন। উল্টে শনিবার স্কুলের ক্যাম্পাসেই রাজেশ সরকার, তাপস বর্মণদের হত্যার বিচার চেয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করে পড়ুয়ারা। তা নিয়ে এ দিন সরগরম হল দাড়িভিট স্কুল। স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে রাজনৈতিক মিছিলে নিষেধাজ্ঞা বহুদিনের। সেই বিতর্কও তৈরি হয়। যদিও নিহতদের পরিবারেরা লোকেরা বলেন, এটা রাজনৈতিক নয়, স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল। তাঁরা পড়ুয়াদের জানান, ছাত্রছাত্রীরা চাইলে ব্যানার থাকবে।

রাত পোহালেই পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আসছেন ইসলামপুরে। তাঁর দাড়িভিটে সভা করার কথা। তার আগে নিহতদের পরিবারের এই স্কুল জুড়ে মিছিলের পিছনে অন্য রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন থাকতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। যদিও তৃণমূল সভাস্থল বদলে এক কিমি দূরে ধোলাইবস্তির মাঠে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে স্কুলচত্বরে কোনও সভা বা জমায়েত করা যাবে না। সেই নির্দেশকে মান্য করেই সভা পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তবে নিহতদের পরিবারেরা কোনও নির্দেশই মানতে নারাজ। স্কুলে লাগানো ব্যানার খোলানোর ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে বোঝাতে এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ দাড়িভিট স্কুল মাঠে ধর্না মঞ্চে যান মহকুমাশাসক মণীশ মিশ্র। কিন্তু বারবার বুঝিয়েও তাঁদের রাজি করা যায়নি। স্কুলের ধারেকাছেও কোনও পুলিশ পিকেটিং নজরে পড়েনি। মণীশ মিশ্র বলেন, ‘‘স্কুলের ব্যানার খোলা নিয়ে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। পুলিশ পিকেটিংয়ের বিষয়টিও পুলিশ-প্রশাসন দেখছে।’’ তবে স্কুলের পোশাকে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া চলায় ছাত্রছাত্রীদের ছুটি হয়ে যায়। তাদের বাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল।’’

এ দিন দুপুরে ছাত্রছাত্রীরা ধর্না মঞ্চের সামনে জড়ো হয়। সেখানে ছিলেন নিহত পরিবারের সদস্যরা। নিহত রাজেশের বোন মৌ সরকার-সহ কয়েক জনের উপস্থিতিতে মিছিল শুরু হয়। মণীশ মিশ্র স্কুলে পৌঁছনোর পরই সেই ধিক্কার মিছিল স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করে স্লোগান দিতে থাকে। মণীশ যখন নিহত পরিবারের লোকেদের সঙ্গে আলোচনা করছেন, তখনও সেখানে ছিল পড়ুয়াদের একাংশ।

রাজেশ এবং তাপসের বাবারা জানান, ছাত্রছাত্রীরাই বলবে তারা কী করবে। রাজেশের বোন মৌ, সুস্মিতা রাজভর, মৌসুমী বিশ্বাসরা বলেছে, ‘‘দাদারা স্কুলের ঘটনায় শহিদ হয়েছে। কাজেই তাদের ব্যানার স্কুল থেকে খোলা যাবে না।’’ দুই নিহতের বাবারা বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরা ওই স্কুল থেকে ব্যানার খুলতে দিতে রাজি নয়। আমরা তাদের পাশে রয়েছি।’’

গত ২০ সেপ্টেম্বর শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দাড়িভিট। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রাজেশ সরকার, তাপস বর্মণ। আহত হয় ওই স্কুলেরই ছাত্র বিপ্লব সরকার। তার পর থেকেই দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। বিপাকে পড়েন পড়ুয়ারা। তা নিয়ে হাইকোর্টের মামলা করেন শান্তি বিশ্বাস ও অন্য বেশ কয়েক জন অভিভাবক। আদালতের রায় অমান্য করা নিয়ে শান্তিবাবু কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পরিবহণমন্ত্রীর সভা হোক। তার পরে বিষয়টি নিয়ে নিজেরা আলোচনা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Darivit School Banner
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE