Advertisement
১১ মে ২০২৪

মহকুমাশাসক দায়িত্ব নিলেন পোষ্যেরও

ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুর জ্যাকির মালিক সুজয় কোচবিহারের চাকিরমোড় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা।

পোষ্য জ্যাকিকে নিয়ে সুজয় সরকার। নিজস্ব চিত্র

পোষ্য জ্যাকিকে নিয়ে সুজয় সরকার। নিজস্ব চিত্র

অরিন্দম সাহা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫০
Share: Save:

মালিক অন্ত প্রাণ ‘জ্যাকি’র। তাঁর সঙ্গেই সকাল, বিকেল ঘুরে বেড়ানো দৈনন্দিন রুটিন। বাড়িতে খাবার দিতে হলেও মালিককেই চাই। নইলে সে পছন্দের খাবার, মাংস দেখলেও মুখে তুলতে চায়না। সেই মালিক, প্রাথমিক শিক্ষক সুজয় সরকারের ভোটের ডিউটি পড়েছিল, তাই প্রিয় পোষ্য জ্যাকিকে নিয়ে মহা চিন্তায় পড়ে যান তিনি। কী করবেন ভেবে না পেয়ে, ভোটের আগের দিন বুধবার জ্যাকিকে নিয়েই সটান হাজির হন কোচবিহার পলিটেকনিকের ভোট সামগ্রী বিলি ও গ্রহণ কেন্দ্রে (ডিসিআরসি)।

বুথে যেতে জ্যাকিকেও সঙ্গী করবেন বলে ঠিকও করে ফেলেছিলেন তিনি। তা নিয়ে অবশ্য সমস্যা তৈরি হয়। এগিয়ে আসেন কোচবিহার সদরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল। তিনি নিজের বাংলোতেই জ্যাকির থাকা, খাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। কুকুরের মালিকও নিশ্চিন্তে ভোট নিতে যান। দু’দিন এসডিও বাংলোয় ‘অতিথি’ হয়ে থেকে শুক্রবার জ্যাকি ফিরেছে সুজয়ের কাছে।

ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুর জ্যাকির মালিক সুজয় কোচবিহারের চাকিরমোড় লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, “বাড়িতে সবসময় আমার কাছাকাছি থাকবে জ্যাকি। রাতে ঘুমোতে গেলেও দরজা খোলা রাখতে হয়। দরজার সামনে পাহারা দেয় জ্যাকি। বাড়ির অন্যদের কাছে খেতেও চায় না। ওরা ঠিকঠাক সামলাতেও পারে না। তাই ওকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম। খুব একটা দুষ্টুমি করে না বলে ডিসিআরসিতে নিয়ে যাই। এসডিও স্যার দায়িত্ব নেবেন ভাবিইনি।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মহকুমাশাসকের বাংলোয় কেমন ছিল ‘অতিথি’? মহকুমাশাসক সঞ্জয়ের স্ত্রী রিঙ্কুদেবী জানাচ্ছেন, “ভীষণ সুন্দর জ্যাকি। আমি এমনিতে পশুপাখি ভালবাসি। তবে শুরুতে কাছে আসতে চাইছিলনা। মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করতেই কেমন নেওটা হয়ে যায়। দুধরুটি, ভাত, মুরগির মাংস, ডাল, ডিম বাড়ির রান্না খাবার আমিই খাইয়েছি।” মহকুমাশাসক বলেন, “বুথে পোষ্য নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না বলে ওকে রাখতে উদ্যোগী হই।” সুজয় বলছিলেন, “আমার হাতে ছাড়া জ্যাকি খায় না। বাংলোয় রাখার সময় জ্যাকির প্রতি সবার ভালবাসা দেখে অনেকটাই আশ্বস্ত হয়ে বুথে যাই।” সুজয়ের স্ত্রী শুক্লা বলেন, “আত্মীয়ের বাড়ি গেলেও জ্যাকি ওর সঙ্গে যায়। তাই চিন্তায় ছিলাম।”

জ্যাকির বয়স এখন ন’মাস। শিলিগুড়ি থেকে তিনমাস বয়সে সুজয় তাঁকে এনেছিলেন। জ্যাকি তখন ছানা। কয়েকমাসেই হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে জ্যাকি। কোচবিহারের জেলাশাসকও মহকুমাশাসকের ‘সারমেয় প্রেমের’ কথা জেনেছেন। জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “এত দায়িত্ব সামলেও অবলা প্রাণী নিয়ে ভাবনা, আগলে রাখার ব্যবস্থা দারুণ ব্যাপার।”

শনিবার সকালেও সুজয়ের সঙ্গে রীতিমতো খুনসুটিতে মজে ছিল জ্যাকি। কখনও ঝাঁপিয়ে গায়ে চড়ার উপক্রম করছে, কখনও আবার সুজয় মাথায় হাত বোলাতেই ‘আদর’ খেয়েছে। সুজয় ও জ্যাকির ভালবাসা যেন দু’দিনের ব্যবধানে কয়েকগুণ বেড়েও গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE