নির্দিষ্ট সময়ের দেড়মাস আগে থেকেই রায়গঞ্জ কুলিক ছেড়ে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির দল। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এখনও পর্যন্ত ৫০ শতাংশেরও বেশি পরিযায়ী এখানকার পক্ষীনিবাস থেকে বিদায় নিয়েছে। ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বন দফতরের কর্তারা। এর কারণ জানতে সমীক্ষা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর।
পরিবেশ ও পশুপ্রেমীদের দাবি, খাদ্যসঙ্কটের জেরেই পরিযায়ীরা এ বছর নির্দিষ্ট সময়ের আগে পক্ষীনিবাস ছাড়তে শুরু করেছে। বন দফতরের দাবি, এ বছর প্রায় এক লক্ষ পরিযায়ী এসেছিল। ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার পরিযায়ী পক্ষীনিবাস ছেড়ে চলে গিয়েছে। এ ব্যাপারে রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দীপর্ণ দত্তকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। যদিও বন দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, এ বছর নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগেই পরিযায়ীরা পক্ষীনিবাসে এসেছিল। ফলে তাদের প্রজননও আগে হয়েছে। সেই কারণে, তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে কিনা, তা সমীক্ষায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পক্ষীনিবাস চত্বরে পরিযায়ীদের খাদ্যের অভাব নেই। গত এক দশকে পক্ষীনিবাসের ক্যানালে বহু মাছ ছাড়া হয়েছে। পক্ষীনিবাসের বিভিন্ন এলাকায় কলা, পেয়ারা, পেঁপে, বাতাবি লেবু, জাম, বেদানা-সহ বিভিন্ন ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। সেইসব গাছে এ বছর ফলনও হয়েছে।
প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ওপেন বিলস্টক, নাইট হেরন, করমোন্যান্ট, ইগ্রেট-সহ বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুলিক পক্ষীনিবাসে আসে। এখানকার কয়েক হাজার গাছে পরিযায়ীরা বাসা বেঁধে প্রজনন করে। ডিম ফুটে ছানারা ওড়া শিখলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তারা ফিরে যায়। পরিযায়ীরা পক্ষীনিবাস লাগোয়া কুলিক নদী ও লাগোয়া ক্যানাল থেকে মাছ, শ্যাওলা, শামুক, কাঁকড়া-সহ বিভিন্ন জলজ পোকা ও বিভিন্ন গাছের ফল খেয়ে বেঁচে থাকে।
রায়গঞ্জের একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের দাবি, ভিনরাজ্য থেকে আসা একাধিক মাছ সরবরাহকারী ট্রাক দিনভর নদীর জলে সাফাই করা হয়। ওই নদীর সঙ্গে পক্ষীনিবাসের ক্যানালের সংযোগ রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে একটানা দূষণের জেরে কুলিক নদী ও ওই ক্যানালে মাছ, শ্যাওলা, শামুক, কাঁকড়া ও বিভিন্ন জলজ পোকার সংখ্যা কমছে। এর জেরেই পরিযায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ের চলে যেতে শুরু করেছে বলা তাদের ধারণা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি কবিতা বর্মণের দাবি, জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও রায়গঞ্জের বিভাগীয় বন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কুলিক নদীর দূষণ রুখতে একটি প্রকল্প চালু করার চিন্তাভাবনা শুরু করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy