Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কয়লা কাহিনি
Illegal coal mining

অবৈধ কয়লার টাকা যায় অন্যত্রও

এর পরেই এই পাচার চক্র নিয়ে অনেক কথাই বললেন। যার সারমর্ম হল, এই পাচার চক্রের বেশ কিছু এজেন্ট জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, রাজগঞ্জ আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে ছড়িয়ে রয়েছে।

—প্রতীকী চিত্র

—প্রতীকী চিত্র

রাজু সাহা
কুমারগ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১২
Share: Save:

জাতীয় সড়ক ধরে অবাধে অসম থেকে কোটি কোটি টাকার কয়লা প্রতিদিন পাচার হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে। তার করিডর হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে উত্তরবঙ্গকে। অথচ এই পাচার আটকাতে পুলিশের সে-ভাবে সক্রিয় নয় কেন? এই প্রশ্নে বেশ অর্থপূর্ণ ভাবেই হাসলেন ওই রুটের এক ট্রাকচালক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চালকের বক্তব্য, পুলিশ সক্রিয় হলে প্রতিদিনই কয়লা বোঝাই কয়েকশো বেআইনি ট্রাক ধরা পড়ত। এমনকি, তিনিও বহুবার ধরা পড়তেন।

এর পরেই এই পাচার চক্র নিয়ে অনেক কথাই বললেন। যার সারমর্ম হল, এই পাচার চক্রের বেশ কিছু এজেন্ট জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, রাজগঞ্জ আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে ছড়িয়ে রয়েছে। চক্রের মূল পান্ডা জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের বাসিন্দা। চক্রের লোকজনের কাছে সেই ব্যক্তি ‘ঘোষ’ নামে পরিচিত। ওই ঘোষের নির্দেশে মেনেই উত্তরবঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এজেন্টরা কাজ করে। অসমের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে পাচার প্রক্রিয়াকে মসৃণ রাখে ওই এজেন্টরাই। এই এজেন্টদের পরিচালনার করে ‘শর্মা’ নামে এক ব্যক্তি। তারপর ওই চালক কিছুটা মৃদু গলাতেই বললেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় হবে কী করে? ওই সব টাকার একটা বড় অংশ তো অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’ কার কাছে? এবার চালক বেশ সতর্ক, ‘‘আর কিছু জানতে চাইবেন না।’’ তবে এ-ও জানালেন, এসব কথা তিনি শুনেছেন মাত্র।

অভিযোগ, এর পরেও প্রশাসন এই পাচার বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। পুলিশ অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি, অসম সীমানা পেরিয়ে কয়লার অবৈধ ব্যবসা বন্ধে লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা নিয়ে নিয়মিত অভিযান চলে। ট্রাক ধরে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়েছে বলেও পুলিশের দাবি।

বিজেপির জেলার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব সরকার বলেন, “ইটভাটা, চা বাগান ও বিভিন্ন কারখানায় কয়লার প্রয়োজন হয়। সে সবের প্রয়োজনে উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকার কয়লা পাচার করা হয়। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে, যাতে এই ধরনের চোরাকারবারীদের ধরা যায়।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী অবশ্য বক্তব্য, “বিভিন্ন রাজ্য থেকে সড়কপথে কয়লা নিয়ে যাওয়া হয়। কোনটা অবৈধ ভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আর কোনটা বৈধ, সেটা পুলিশ-প্রশাসনকেই দেখতে হবে। যদি চোরাচালান হয়, তা হলে তা রুখতে ব্যবস্থাও নিতে হবে।” আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “অবৈধ ভাবে কয়লা পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত নজরদারি চলে। পাচারের তথ্য হাতে এলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাচারকারীদের ধরে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হচ্ছে।’’

জেলা পুলিশের অন্য এক কর্তা জানান, যেসব কয়লা বোঝাই ট্রাকের কাগজপত্র থাকে না, সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যাদের কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে, সেগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। কয়লা বৈধ ভাবে রফতানির ক্ষেত্রে কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের অনুমতিপত্র থাকা দরকার। রাজস্ব দফতরের ছাড়পত্রও থাকতে হবে। একটি ট্রাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য তোলা যায়। সেইসব নিয়ম ভেঙে কয়লা নিয়ে গেলে সেইসব ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal coal mining Coal Mining
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE