Advertisement
১০ মে ২০২৪

বর্ষাতেই শীতের সাজ শুরু করল নাইটিঙ্গল

শীতে পর্যটক টানতে সাজ শুরু হয়েছে বর্ষা থেকেই। এক দিকে, পাইন আর ঝাউবনে দৃষ্টি আটকে যায়, অন্য দিকে দৃষ্টিজুড়ে শুধুই কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ তুষারাবৃত পূর্ব হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গ। চারপাশে গোলাপ বাগান, মরসুমি ফুলের গ্লাস হাউস, নকশা করা পাতাবাহারের গুচ্ছের মাঝে, ‘আমেরিকান রুফিং’ দিয়ে তৈরি হয়েছে ৩১টি ছোট ছাউনি।

ফুলের বাগান, গ্লাস হাউসে চলছে পর্যটকদের জন্য প্রস্তুতি। ছবি: রবিন রাই।

ফুলের বাগান, গ্লাস হাউসে চলছে পর্যটকদের জন্য প্রস্তুতি। ছবি: রবিন রাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

শীতে পর্যটক টানতে সাজ শুরু হয়েছে বর্ষা থেকেই। এক দিকে, পাইন আর ঝাউবনে দৃষ্টি আটকে যায়, অন্য দিকে দৃষ্টিজুড়ে শুধুই কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ তুষারাবৃত পূর্ব হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গ। চারপাশে গোলাপ বাগান, মরসুমি ফুলের গ্লাস হাউস, নকশা করা পাতাবাহারের গুচ্ছের মাঝে, ‘আমেরিকান রুফিং’ দিয়ে তৈরি হয়েছে ৩১টি ছোট ছাউনি। যার নীচে কংক্রিটের বেঞ্চে বসে ধোঁয়া ওঠা কফি কাপ হাতে বসতে পারবেন পর্যটকেরা। পাশে থাকবে কাচের ঘেরাটোপে রেস্তোরাঁও। এ ভাবেই সেজে উঠছে দার্জিলিঙের নাইটিঙ্গল পার্ক।

মরসুমি ফুলের জন্য তৈরি হয়েছে গ্লাস হাউস। বাগানের দু’দিকে তৈরি হয়েছে গোলাপ বাগান। বৃত্তাকার সবুজ মাঠের চারপাশে লিলি ফুলের বেড়া দিয়ে ঘেরা। তৈরি হচ্ছে ছোটদের জন্য নানা ‘রাইড’। পার্কের পুরো নাম শ্রুবেরি নাইটিঙ্গল পার্ক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য জেলাশাসকের বাংলো, রিচমন্ড হিলের কিছুটা উপরে থাকা এই পার্ক বরাবরই পর্যটকদের অবশ্য গন্তব্যের মধ্যে পড়ে। শীতের কনকনে ঠান্ডার মরসুমেও দার্জিলিঙে দেশি-বিদেশি পর্যটক টানতে ‘উইন্টার প্যাকেজ’ পরিকল্পনা করেছে জিটিএ-এর পর্যটন দফতর। সেই প্যাকেজেই সাজছে নাইটিঙ্গল পার্কও। শীতের মরসুমে গোলাপ বাগানের লাল, ঘাসের সবুজ আর রংবেরঙের মরসুমি ফুলের সাজ পর্যটকদের তাক লাগিয়ে দেবে বলে পর্যটন দফতরের দাবি। শুধু তাই নয়, পার্কের মাঠে মুক্তমঞ্চে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধে পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলবে।

পার্কের তিন দিক পাইন-ঝাউয়ে ঘেরা। লম্বা পাইন বনের মাথায় সারা বছরই কুয়াশা লেগে থাকে। কুয়াশা মাখা ঝাউয়ের পাতা, হাওয়ায় নড়লেই বৃষ্টির মতো জল ঝরে পড়ে। লম্বা গাছগুলিতে যেন সারা বছরই শীত লেগে থাকে। পার্কের এক দিকে খাদ। তবে খাদের গায়ে রেলিং বসিয়ে অনেকটা পাকদন্ডি রাস্তার মতো সিঁড়ি বসানো হয়েছে। সিঁড়ির কয়েক ধাপ পরে পরেই বসার জন্য কংক্রিটের ছাউনি। খাদের উপরে সেই সব ছাউনিতে সারা দিন বসে থাকলেও, কেউ ডাকতে আসবে না। এই জায়গার নাম ‘সাইলেন্ট জোন’। আগামী দু’মাসের মধ্যেই পার্কে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম পাতাবাহারের ঝোপ। সেখানে এক বার ঢুকলে বের হওয়ার পথ খুঁজে পেতে বেগ পেতে হবে। এটিও পর্যটকদের বিনোদনের কথা ভেবে তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে একটি আধুনিক রেস্তোরাঁও।

পার্ক সাজিয়ে তোলার দায়িত্বে থাকা সংস্থার কর্ণধার কেশাং শেরপা বলেন, ‘‘অক্টোবরের মধ্যে পুরো পার্কটি সাজিয়ে তোলা হবে। গোলাপ বাগান আর মরসুমি ফুলের গ্লাস হাউস এমন ভাবে তৈরি হচ্ছে, যে পর্যটকেরা এসে পুষ্প প্রদর্শনী হচ্ছে কিনা তা নিয়ে ধন্দে পড়ে যাবেন। শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকছে।’’

ইংরেজদের হাতেই নাইটিঙ্গল পার্কটি তৈরি হয়। পার্কের নথি বলছে ১৯০০ সালে পার্কটি তৈরি হয়। সে সময় এক সাহেবের ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল এই পার্ক। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জন্য পার্কটি তৈরি হয়। পরে ভূমিকম্পে সেটি ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৩৪ সাল নাগাদ ফের পার্কটি তৈরি হয়। সে সময়ে ব্রিটিশ আধিকারিকদের স্ত্রীদের বসার জন্য পার্কে কিছু বেঞ্চ তৈরি হয়েছিল। আশির দশক থেকে পার্কটিতে টিকিট কেটে পর্যটকদের ঢোকার ব্যবস্থা রয়েছে। দার্জিলিঙে ‘ভিভিআইপি’রা এলে, এই পার্কেও তাঁদের দেখা যায়। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পার্কে ঘুরে গিয়েছেন।

পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবেই দোতলা রেস্তোরাঁ তৈরি হচ্ছে। ছোট ছাউনির মতো অনেকে মিলে বসার জন্য বড় ছাতার আকৃতিতে আমেরিকান রুফের ছাউনিও তৈরি হয়েছে। পর্যটন দফতর জানিয়েছে, পার্ক সাজানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ বার শুধু শীতের অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE