গোরক্ষক: পুণ্ডিবাড়িতে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
একে কুয়াশা। তার উপরে ঘন অন্ধকার। আবছায়া প্রান্তরে কোন দিকে কারা যাচ্ছে, তা বুঝতে আঁধার হাতড়াতে হয়। এখানে শব্দই একমাত্র ভরসা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর। কোথাও কোনও শব্দ পেলে অভ্যস্ত কান বুঝে নিতে পারে, সেখানে কী হচ্ছে। কিন্তু বিএসএফের নতুন কোনও ব্যাটালিয়ন এলে সেই শব্দে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে। অনেক সময় পাচারকারিরা বিএসএফকে বিভ্রান্ত করতে এমন অনেক শব্দের বিভ্রম তৈরি করে, যাতে যে দিকে গরু নিয়ে লোক চলাচল হচ্ছে বলে রক্ষীরা মনে করেন, আসলে তার অন্য দিক থেকে চলে যায় পাচারকারিরা। সীমান্তের গ্রামের লোক জানান, গরু পাচারে বহু টাকা জড়িত। তাই অনেক ঝুঁকি নিয়েও নানা রকম কৌশলই নিতে পিছ পা হয় না পাচারকারিরা। বিএসএফে সূত্রেই জানা গিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় যে সব এলাকায় কাঁটাতার নেই, সেখানে আরও শক্তিশালী আলোর ব্যবস্থা না করলে নজরদারিতে কিছুটা হলেও সমস্যা রয়ে যাবে। এই মুহূর্তে সেখানে পর্যাপ্ত হ্যালোজেন বাতি নেই, সেটাও জানিয়েছেন সীমান্তবাসীরা।
তবে সীমান্তবাসীদের কয়েকজনও যে রাতারাতি মোটা টাকা আয়ের লক্ষ্যে ওই কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন সেটাও গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায়। পুলিশ সূত্রের খবর, চোরাকারবারি দলের ওই ‘এজেন্ট’রা বাড়ির আশেপাশে গরু মজুতের ব্যবস্থা করে। সে জন্য গরু পিছু ৫০-১০০ টাকা তো বটেই, প্রয়োজনে বখশিসও মেলে। বাম জমানায় শাসক দলের পতাকা নিয়ে মিছিলে যোগ দেওয়ার সুবাদে বেশ কয়েকজন ‘এজেন্ট’ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন।
তৃণমূল জমানায় তাঁরা পতাকা পাল্টে ফেলেছেন বলেও গ্রামবাসীরাই জানিয়েছেন। দল বদলালেও পেশা বদলাননি ওই ‘এজেন্ট’রা। তবে ফারাক একটা দেখা যাচ্ছে বলে মেখলিহঞ্জ, দিনহাটা, শীতলখুচির বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায়। তা হল, ইদানীং এই ‘এজেন্ট’রা এলাকায় থাকছেন না। কারণ, রাজ্যের শাসক দলের তরফে সম্প্রতি সীমান্তের গ্রামের দলীয় শাখার নেতা-কর্মীদের ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
গীতালদহে ধরলা নদীর পাড়ে ভোরাম পয়েস্তি এলাকা। নদী পেরোলেই বাংলাদেশ। সেখানে দাঁড়িয়ে কয়েকজন কৃষক জানান, দিনহাটার বিধায়ক তথা রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ এলাকার দলীয় বৈঠকে নিয়ম করে গরু পাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলায় হয়তো ‘এজেন্টরা’ অন্যত্র ঘাঁটি গেড়েছে। তবে রাত নামলেই এলাকায় ফিরে কাজ হাসিল করে অনেকে ভোরে ফিরে যাচ্ছে বলেও এলাকাবাসীর জানাচ্ছেন। উদয়নবাবু বলেন, ‘‘সীমান্ত থাকলেই নানা অসাধু কারবারের চেষ্টা হবে সেটা জানা কথা। আমি দলের প্রতিটি কর্মীকে সতর্ক করে দিয়েছি। এটা জানিয়ে দিয়েছি, গরু পাচারে কারও নাম জড়ালে দল পাশে দাঁড়াবে না। আমিও কোনও তদ্বির করতে পারব না।’’
(সহ প্রতিবেদন: নমিতেশ ঘোষ, অরিন্দম সাহা) (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy