অসহায়: কোলে দুই মেয়েেক নিয়ে সাবেরের স্ত্রী আফরিনা। জলপাইগুড়ির বাড়িতে। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
কোনও নথিতে নাম রয়েছে সাবির। কোনও পরিচয় পত্রে আবার লেখা রয়েছে ছাবির। কোথাও লেখা সাবের, আবার কোথাও ছাবের। অভিযোগ, একই নামের পাঁচরকম বানান লেখা ছিল বিভিন্ন সরকারি পরিচয়পত্রে। এনআরসি আতঙ্ক গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে সাবের আলি জানতে চেয়েছিলেন, তাঁর নামের যে বানানটি ঠিক সেটি প্রমাণ করবেন কী করে? নামের বানান ভুল থাকলে কি দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে? বাসিন্দারা কেউ উত্তর দিতে পারেননি। পরিবারের দাবি, সেই ভয়েই ৩২ বছরের সাবের আলি গত মঙ্গলবার কুয়োয় ঝাঁপ দেন।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৪ কিমি দূরে বাহাদুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সর্দারপাড়ার স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সাবের। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছিলেন তিনি। চাউলহাটি পাকা রাস্তার বাঁদিকের গলি ধরে কিছুদূর এগিয়ে কাঁচা রাস্তা শেষ হলেই সাবেরের টিনের ছাউনির ছোট একটা বেড়ার ঘর। দিনমজুরের কাজ করতেন। পাশাপাশি চা পাতাও তুলতেন। সেই আয়েই চলত সংসার। নিজের ভিটেমাটি বলতে কিছুই ছিল না। দাদার দেওয়া ঘরে চার ও সাত বছরের দুই কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাবের।
সাবেরের স্ত্রী আফরিন বললেন, “এনআরসির কথা শুনে উনি (সাবের) বলেছিলেন, নিজেদের জমির কাগজ নেই। নামের বানানও ভুল। দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে।” কথা বলতে বলতে চোখ দিয়ে জল গড়ায় তাঁর। সঙ্গে সঙ্গে পড়শি বৃদ্ধা এসে আফরিনের মাথায় হাত রাখেন। একটু সামলে আফিরনের প্রশ্ন, “উনি তো নেই। আমাদের কি তাড়িয়ে দেবে?”
বুধবার বাজার হয়নি। চুলোও জ্বলেনি বাড়িতে। পড়শিরাই খাবার এনেছেন। আর আফরিন উঠোনে বসে কথা বলতে বলতে বারবারই তাকাচ্ছেন কুয়োটির দিকে। আর অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছেন। তখন তাঁর কোলে বসে দুই কন্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy