শোকগ্রস্ত: রামনাথ করাটির বাড়ির লোক। নিজস্ব চিত্র
নার্সিংহোমের চারতলায় শৌচাগারের জানলা খুলে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেলেন এক রোগী। সোমবার ভোরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের কাছে একটি নার্সিংহোমের ঘটনা। এই ঘটনা ঘিরে এ দিন দফায় দফায় সকাল থেকে উত্তেজনা তৈরি হয়। প্রথমে পরিবারের লোকেরা গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তারপরে নার্সিংহোমে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপির লোকজন। শেষপর্যন্ত পুলিশের পদস্থ আধিকারিকরা বিরাট বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
মৃত ব্যক্তির নাম রামনাথ করাটি (৩৫)। তাঁর বাড়ি কাওয়াখালির বিধানপল্লিতে। দার্জিলিংমোড়ে একটি গ্যারাজের কর্মী ছিলেন তিনি। বাড়িতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে ৬ অক্টোবর রামনাথকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করান পরিবারের লোকেরা। বাড়ির লোকের দাবি, রামনাথ সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে সাধারণ শয্যায় দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। চিকিৎসকদের একাংশ তাঁকে ছুটি দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। রোগীর জন্য আলাদা ‘অ্যাটেনডেন্ট’ রাখা হয়েছিল। তারপরেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিবার। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে গাফিলতির অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছে পরিবার।
স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে কেঁদে চলেছেন স্ত্রী লক্ষ্মী করাটি। লক্ষ্মীর বোন রীতা বলেন, ‘‘দু’দিন আগে নার্সিংহোমে এক চিকিৎসক বলেছিলেন মস্তিষ্কে সমস্যা রয়েছে। আরও দিন ১৫ থাকতে হবে। পরে আর এক চিকিৎসক বলেছিলেন শরীর ঠিক আছে। এ দিন ছুটি নিয়ে বাইরে বাকি চিকিৎসা করানো হবে বলে ঠিক ছিল। কেন রোগীকে দেখে রাখতে পারলেন না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ সেটাই বুঝতে পারছি না।’’
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোট সাড়ে ৬টা নাগাদ শৌচাগারে যান রামনাথ। বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মহিলা অ্যাটেনডেন্ট। বেশকিছু সময় পেরিয়ে গেলেও রামনাথ বেরচ্ছেন না দেখে খোঁজ করতে থাকেন তিনি। তখনই জানাজানি হয় একজন রোগী নীচে ঝাঁপ দিয়েছেন। শৌচাগারটির জানলার মেঝে থেকে মাঝামাঝি একটা অংশ রয়েছে। যেটির কাচের পাল্লা খোলা যায়। তা খুলেই রোগী ঝাঁপ দিয়েছেন বলে অভিযোগ। পাঁচতলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে প্রথমে চারতলার একটি টিনের শেডের উপর পড়েন রামনাথ। তারপরে সেখান থেকে নীচে কংক্রিটের উপর আছড়ে পড়েন তিনি। নার্সিংহোমের সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর নাক ও কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও বাঁচানো যায়নি বলে দাবি করেন নার্সিংহোমের কর্ণধার জেপি শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘রোগী আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা। পুলিশ তদন্ত করছে।’’
এরই মধ্যে নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বেলা ১২টা নাগাদ মৃতের স্ত্রী-ছেলেকে না জানিয়ে ভুল বুঝিয়ে এক আত্মীয়কে সই করিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠান হয়। এই নিয়ে ফের উত্তেজনা ছড়ায়। ডিসি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘একজন রোগী ঝাঁপ দিয়েছেন বলে খবর পেয়ে আমরা যাই। সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়েছে। রোগীর পরিবারের অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy