চোপড়ার দাসপাড়ায় বাঁশের ব্যারিকেড করে বন্ধ বিরোধীদের। নিজস্ব চিত্র
পর পর গুলির আওয়াজ। আর্তনাদ। কোনও রাত জেগেই কাটান দাসপাড়ার বাসিন্দারা। আবার কোনও রাতে লাগাতার বোমার লড়াইয়ে ঘুম ভেঙে যায় লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দাদের। এমনই নিদ্রাহীন কাটে লাগোয়া চুটিয়াখোরের বাসিন্দাদেরও। চোপড়ার ওই ক’টি গ্রামে যেন অলিখিত ‘যুদ্ধ’ লেগেই রয়েছে। অথচ পুলিশ হানা দিলেও বেশি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত হয়নি। বোমাবাজি, গুলির লড়াইয়ে জড়িতদের হদিশও করতে পারেনি তারা। শুধু তাই নয়, ‘স্পেশাল টিম’ গড়েও গুলি-বারুদ, বোমা উদ্ধারে তেমন সাফল্য পায়নি পুলিশ। সব মিলিয়ে চোপড়া আছে যেন সেই চোপড়াতেই।
কেন এমন মারপিট, গুলি-বোমার লড়াই তা এলাকার অনেকেই জানেন। বোঝেনও। যুযুধান দলের নেতাদের মধ্যে দোষারোপ চলছেই। তা দেখে বাসিন্দারা আরও আতঙ্কিত। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, দোষারোপের প্রবণতা বন্ধ করে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে গোটা এলাকা একদিন পুরোপুরি বন্দুকবাজ, সমাজবিরোধীদের হাতে চলে যেতে পারে। তাই শান্তি কমিটিও তৈরি হয়েছে। চোপড়ার দাসপাড়া শান্তি রক্ষা কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের বলেন, ‘‘কমিটির সদস্যরা সকলকে মাথা ঠান্ডা রাখতে আহ্বান করেছিলেন। কিন্তু, এক দল শান্ত থাকলেও অপর পক্ষ মাথা গরম করে। তাতে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।’’
ঘটনা হল, ২০০৪ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে চোপড়ায় একই দিনে ৫ জন খুন হয়েছিলেন। সে বছর কংগ্রেস ভোট বয়কট করে। কারণ, তাদের ৪ জন খুন হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে প্রকাশ্য দিবেলোকে খুন হন চোপড়ার পঞ্চায়েত সমিতির ভূমিকর্মাধক্ষ্য নাজির আহমেদ। এক বছর আগে একটি রাজনৈতিক বৈঠক চলার সময় তৃণমূল কর্মীদের হাতে খুন হন চোপড়ার বিজেপি নেতা অরেন সিংহ।
এলাকা দখলের লড়াই এখনও চলছেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে মাস দেড়েক ধরে বোমাবাজি চলছেই। ভোট মেটার পরেও তা থামেনি বলে অভিযোগ। গত এক মাসে চোপড়ায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে একজন বিজেপি কর্মী, আর এক জন কংগ্রেসের। যদিও বিজেপি কর্মীর মৃত্যুকে রাজনৈতিক নয় বলেই জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্তারা। গত ১৪ এপ্রিল বোমাবাজির মাঝে পড়ে হুড়োহুড়ি করার সময় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নির্বাচনকে ঘিরে আহতের সংখ্যাও কম নেই। ২২ মে এক ব্যক্তির চোখে গুলি করার অভিযোগ ওঠে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বিহার লাগোয়া ওই এলাকায় অসামাজিক কারবারের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতেই দুষ্কৃতীরা রাত হলেই দাপিয়ে বেড়ায়।
তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমানও কয়েকটি গ্রামে লাগাতার দুষ্কৃতী তাণ্ডবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত চোপড়া জুড়ে গন্ডগোল নেই। এক-দুটি গ্রাম অশান্ত করে রেখেছে কিছু দুষ্কৃতী। তাদের গ্রেফতার করলে গন্ডগোল থাকত না।’’ চোপড়ার কংগ্রেস নেতা অশোক রায় দাবি করেন, বিরোধীরা এক জোট হওয়ায় অনেক জায়গায় গোলমাল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে দুষ্কৃতীরা। সিপিএম নেতা আনওয়ারুল হকও পুলিশকে দুষেছেন।
তা হলে পুলিশ টহল দিচ্ছে না? বিহার থেকে যাতায়াতের পথে নজরদারি বাড়াচ্ছে না? জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় বলেই বোমা-গুলির লড়াই আয়ত্তে। প্রচুর বোমা-গুলি উদ্ধার হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy