এক সময় তাঁকে দেখলে হাতজোড় করত গ্রামের মানুষ। কেউ কেউ আবার তাঁকে হাসিমুখ দেখানোর জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন বাড়ির সদর দরজায়। আর এখন তাঁরই ফাঁসির দাবিতে একজোট হয়েছেন ওঁরা।
তিনি তখন কোচবিহারের পাটছড়ায় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও তিনি। সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ কালীশঙ্কর রায়ের শাস্তির দাবিতেই এ দিন আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখালেন পাটছড়ার মানুষ। গত ১৮ মে ওই এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সুভাষ রায়কে (৪৮) খুনের অভিযোগ ওঠে কালীশঙ্কর ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম। ঘটনার পরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান ওই তৃণমূল নেতা। ১২ দিন ফেরার ছিলেন তিনি। প্রশাসন তাঁকে ইচ্ছে করে আড়াল করছে বলে তখন অভিযোগ তুলেছিলেন দলেরই একাংশ। এই নিয়ে দলের অন্দরেও দ্বন্দ্ব প্রকট হয়।
আসলে কে এই কালীশঙ্করবাবু? তাঁর সঙ্গেই বা আছেন কারা? দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাটছড়ায় কালীশঙ্করের দাপট বাম আমল থেকেই। সে সময় তিনি ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ছিলেন। ২০০৮ সালে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হন। বিরোধীরা দাবি করেন, সে সময় গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করতেন কালীশঙ্কর। তাঁর কথাতেই সবাইকে চলতে হত। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার কিছুদিন পরে সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। নিজের প্রভাবকে কাজে লাগিয়েই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য থেকে দলের অঞ্চল সভাপতির দায়িত্ব পান। তাঁকে পাটছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান করা হয়। বিভিন্ন সময়ে ইন্দিরা আবাস –সহ বেশ কিছু প্রকল্পে বহু টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
এলাকার তৃণমূল সমর্থকদের দাবি সুভাষবাবু বরাবর দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদে সরব হতেন। পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাসনের ঘর সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজের দুর্নীতির অভিযোগ পেলেই প্রতিবাদ করতেন তিনি। বিভিন্ন সময় গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। অভিযোগ, সে জন্যেই তাঁকে খুন করে কালীশঙ্কর ও তাঁর অনুগামীরা।
কালীশঙ্করের আত্মীয়রা অবশ্য দাবি করেছে, তিনি ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। তৃণমূলের কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক সভাপতি খোকন মিয়াঁ বলেন, “ওই ঘটনা বিচারাধীন। আইন আইনের পথে চলবে। দলীয় ভাবে আমরা অভিযুক্তদের বহিষ্কার করেছি।” ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন বিধায়ক অক্ষয় ঠাকুর বলেন, “কালীশঙ্কর আমাদের সঙ্গে যখন ছিলেন তখন তাঁকে ভাল বলেই সবাই চিনতেন। তৃণমূলে যাওয়ার পরেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।”
সুভাষবাবুকে খুনের মামলায় ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষে শনিবার কোচবিহার জেলা আদালতে তোলা হয়েছিল কালীশঙ্কর-সহ ১৩ জন অভিযুক্তকে। সেই খবর আগে থেকে জানা থাকায় এ দিন সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ভিড় জমান তৃণমূল কর্মী সমর্থক –সহ এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের গাড়ি অভিযুক্তদের নিয়ে আদালত চত্বরে ঢুকতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তারা। শুরু হয় পুলিশ ভ্যানে ভাঙচুর। তাদের ছোড়া এলোপাথাড়ি ইটের ঘায়ে জখম হন চারজন সিভিক ভলান্টিয়ার। বেলায় তাদের আদালত থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময়েও বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy