প্রহরা: আলিপুরদুয়ারের প্রমোদনগরে পুলিশ পিকেট। ছবি: নারায়ণ দে
মুন্ডু রহস্য আরও ঘনীভূত হল আলিপুরদুয়ারে৷ মুণ্ডহীন দেহ মেলার পরে সেই মুন্ডুর খোঁজ চলছিল। শুক্রবার একটি মুন্ডু উদ্ধারের খবর পেয়ে পুলিশ সেখােন গেলেও দেখা গেল সেই মুন্ডু অালাদা!
আলিপুরদুয়ার শহরে জোড়া খুনের ঘটনা নিয়ে জেলা জুড়ে হইচই চলার মাঝেই শুক্রবার কালচিনিতে একটি ঝোরার পাশ ‘নতুন’ ওই মুন্ডুটি উদ্ধার হয়৷ প্রথমে ওই কাটা মুন্ডুটি সঞ্জয় কলোনির খোকন চৌধুরীর দেহের বলে পুলিশ সন্দেহ করলেও, তা দেখে খোকনের বাড়ির লোকজন সেই সন্দেহ খারিজ করে দেন৷ এই অবস্থায় আরও ধন্দে পড়ে যাওয়া পুলিশ এই ঘটনায় নতুন একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহের খোঁজ শুরু করেছে৷ সেই সঙ্গে ওই মুন্ডু কী করে ঝোরার পাশে গেল তারও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷
৩০ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরিয়ে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান আলিপুরদুয়ার শহরের ১৮ ওয়ার্ডের প্রমোদ নগরের বাসিন্দা ৩৫ বছরের যুবক পিন্টু দাস৷ এক সপ্তাহ পর গত মঙ্গলবার কালচিনির পানিঝোড়ার জঙ্গল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ৷ পিন্টুর বাড়ির লোকেদের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ওই রাতেই সেই ১৮ নম্বর ওয়ার্ডেরই সঞ্জয় কলোনি থেকে খোকন চৌধুরী নামের ২৭বছরের এক যুবক নিখোঁজ হয়ে যান৷ ঘটনাচক্রে পিন্টুর বাড়ি থেকে খোকনের বাড়ির দূরত্ব মাত্র তিনশো মিটারের মতো৷
খোকন নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর বুধবার সকালে আলিপুরদুয়ার শহরের কাছে পাটকাপাড়া চা বাগান থেকে একটি মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়৷ বৃহস্পতিবার সেই দেহটি খোকনের বলে দাবি করেন তার বাড়ির লোকেরা৷ মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে কার্যত একই এলাকায় দু’টি খুনের ঘটনা সামনে আসায় গোটা শহরজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে৷ পুলিশ সূত্রের খবর, এরই মধ্যে শুক্রবার বিকেলে নিমতি থেকে কালচিনি যাওয়ার রাস্তায় একটি কালভার্টের নীচে থাকা ঝোরার ধারে জঙ্গলে একটি কাটা মুন্ডু পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় কালচিনি থানার পুলিশ৷ কাটা মুন্ডুটি শনাক্ত করতে খোকনের দাদা রতন চৌধুরীকে নিয়ে সেখানে রওনা হন আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ৷ কিন্তু সেই কাটা মুন্ডুটি খোকনের দেহের নয় বলে জানিয়ে দেন তাঁর দাদা৷ রতনের কথায়, “মাথার ওই অংশটি দেখেই বুঝতে পারি ওটা আমার ভাইয়ের নয়৷” জয়গাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হচ্ছে৷ মুন্ডুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান হচ্ছে৷ ভবিষ্যতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এর কিছু অংশ সংরক্ষণ করা হবে৷”
তবে খোকনকে কারা নৃশংসভাবে খুন করে দেহ ও মাথা আলাদা করে দিল, সেই তদন্তে এখনও অন্ধকারে পুলিশ৷ তদন্তকারীদের আশা ছিল, এ দিন কাটা মুন্ডু খোকনের বলে শনাক্ত হলে সেই সূত্রে তদন্ত কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে৷ কিন্তু তাতে জল ঢেলে দিয়েছেন খোকনের পরিজনেরা৷ এই অবস্থায় এই খুনের ঘটনা নিয়ে ধন্দ কাটছে না পুলিশের৷
পুলিশ সূত্রের খবর, খোকনের দেহটি শনাক্ত হওয়ার পরই তার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ৷ পাশাপাশি এই দু’দিনে আরও তিন-চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ৷ কিন্তু কারও থেকেই তেমন কোনও তথ্য পাননি তদন্তকারীরা৷ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে খোকনের বন্ধু দাবি করেন, নিখোঁজ হওয়ার দিন কালজানি নদীর বাঁধ পেরিয়েই খোকন তাঁর সঙ্গে অন্য কোথাও চলে যান৷ এই পরিস্থিতিতে শহরের বিভিন্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা শুরু করেছে পুলিশ৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy