মৃত গৃহবধূ লাবণী সরকার। —নিজস্ব চিত্র
পণের টাকা চেয়ে না পাওয়ায় এক গৃহবধূকে খুনের অভিযোগ উঠল শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে। সোমবার রায়গঞ্জের মোহনবাটী লাগোয়া নেতাজিপল্লি এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম লাবণী সরকার (২২)। ওই রাতেই মৃতার স্বামী ও দেওরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম সঞ্জয় দাশগুপ্ত ও পার্থ দাশগুপ্ত। অভিযুক্তদের মঙ্গলবার রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক স্মিতা সাহা তাদের সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
রবিবার রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তার আগে এ দিন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে পুলিশ মৃতার মা তনুশ্রী সরকারের গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করে পুলিশ। সেই সময় পুলিশ তনুশ্রীকে একটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয় বলে অভিযোগ। ওই অভিযোগে এ দিন বিকেলে লাবণীর বাপেরবাড়ির লোকজন ও স্থানীয় মহিলা সমিতির সদস্যরা হাসপাতাল চত্বরে পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। কেনও তনুশ্রীকে সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হল, সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। পুলিশ ওই খুনের মামলা থেকে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেন তাঁরা। পরে জেলা পুলিশকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে এই মামলার সঠিক তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি
স্বাভাবিক হয়।
উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমারের দাবি, মৃতার স্বামী ও দেওরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। মৃতার মায়ের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার প্রক্রিয়ায় কোনও পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
শোকাহত: ভেঙে পড়েছেন লাবণীর পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র
২০১৬ সালের ৮ মে কালিয়াগঞ্জের হাসপাতালপাড়ার বাসিন্দা লাবণীর সঙ্গে রায়গঞ্জের নেতাজিপল্লির বাসিন্দা পেশায় অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থার কর্মী সঞ্জয়ের বিয়ে হয়। তাঁদের দেড় বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। লাবণীর মায়ের দাবি, বিয়েতে তাঁরা পাত্রপক্ষকে পণ বাবদ তিন লক্ষ টাকা নগদ, কয়েক ভরি সোনার অলঙ্কার এবং আসবাবপত্র দেন। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই টাকা চেয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন লাবণীর উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। লাবণী টাকা আনতে অস্বীকার করায় তাঁকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নিয়মিত মারধর করত।
সোমবার লাবণীকে মারধর করে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পুলিশের দাবি, ওই দিন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা লাবণীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকেরা মৃত বলে জানান। এর পরেই অভিযুক্তরা দেহ রেখে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। রাতে তনুশ্রী লাবণীর স্বামী সঞ্জয়, দেওর পার্থ, শ্বশুর, দুই ননদ ও এক ননদের স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
যদিও ধৃত সঞ্জয় ও পার্থের আইনজীবী জয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, মানসিক অবসাদের জেরে লাবণী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশের কাছে সেই তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy