এ ভাবেই ট্রে-তে তৈরি হয়েছে বীজতলা। নিজস্ব চিত্র
কেউ সকালে বেরিয়ে দুপুরে ফেরেন। কেউ সকালের সংসারের কাজ সামলে ঘর থেকে বেরিয়ে ফেরেন সন্ধ্যায়। ওই সময় কেউ ধানের বীজ তৈরি করে, সর্ষে বা গমখেতের কাজ করেন। কোচবিহারে এই মহিলারাই স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে কৃষিকাজ করে এগোচ্ছেন স্বনির্ভরতার পথে।
কৃষি দফতরও ওই দুশো মহিলার উপরেই আধুনিক চাষের পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে ভরসা রেখেছেন। রবিবার কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের হাওয়ারগাড়িতে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এমনই ১১ জন মহিলার সঙ্গে দেখা করেন জেলাশাসক কৌশিক সাহা। জেলাশাসক বলেন, “অল্প সময়ের মধ্যে তাঁরা যেভাবে ট্রে’তে ধানের বীজ তৈরি করে লাভের মুখ দেখছেন তা অবাক করে। আগামীদিনে আরও বড় সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ওই মহিলারা। আমরা পাশে থেকে সহযোগিতা করব।”
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত কয়েক বছর ধরে আত্মা প্রকল্পে আধুনিক পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষিকাজ শুরু হয় গ্রামে গ্রামে। তার মধ্যে একটি ছিল ট্রে-তে ধানের বীজতলা তৈরি। ওই গ্রামের বাসিন্দা মুন্নি বিবি, ইবিয়া বিবিরা জানান, তাঁরা গত বছর আধা বিঘে জমির উপরে ট্রে-র মাধ্যমে বীজতলা তৈরি করেন। তা বিক্রি করে পনেরো হাজার টাকা লাভ করেন। এ বারে আগাম বরাত নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত এক হাজার বিঘের জমিতে বীজতলা সরবরাহের বরাত পেয়েছেন। এ বারে দু’বিঘে জমিতে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করবেন তাঁরা। সব ঠিক থাকলে এ বারে আয় ৬০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে তাঁরা জানান। মুন্নি বিবি বলেন, “আমরা এগারোজন মহিলা রয়েছি। বাড়ির কাজ সামলে এই কাজ করছি। তাতে এ বারে অনেকটাই লাভ হবে। সংসারের কাজে সহায়ক হবে।”
কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের কৃষি আধিকারিক রজত চট্টোপাধ্যায় জানান, আধুনিক চাষের মাধ্যমে খুব কম খরচ ও পরিশ্রমে অতিরিক্ত আয়ের পথ কৃষকদের দেখানোর লক্ষ্যেই কাজ চলছে। তিনি বলেন, “গ্রামের মহিলারা কৃষিকাজের সঙ্গে বরাবর যুক্ত। তাঁরা শ্রমিক হিসেবে ধানের বীজতলা রোপণ ও তোলার কাজ করতেন। সেই জায়গায় তাঁদের স্বনির্ভর করে আয়ের পথ দেখানোই প্রথম লক্ষ্য ছিল।” তিনি দাবি করেন, কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের বেশ কয়েকটি এলাকায় এখন মহিলা ও পুরুষ প্রত্যেকেই বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করেছে। এই পদ্ধতিতে কী লাভ? উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক বিল্পব মিত্র জানান, সাধারণ পদ্ধতিতে ধানের বীজতলা তৈরিতে যে সময় লাগে,এই পদ্ধতিতে তার অর্ধেক লাগে। অল্প জমিতে অনেক বেশি বীজতলা তৈরি করা যায়। তিনি বলেন, “খরচ কম, আয় বেশি হবে।”
এ দিন কোচবিহার সদর মহকুমাশাসক সঞ্জয় পালও জেলাশাসকের সঙ্গে ছিলেন। মহকুমাশাসক বলেন, “মহিলারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের দেখে অনেকেই ওই কাজে আগ্রহও প্রকাশ করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy